Health Tips

চুলের খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে জেনে নিন

আজকে প্রাকৃতিক ভাবে চুলের খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। খুশকির জন্য সমস্যায় পড়তে হয়নি এমন মানুষ খুব কমই রয়েছে, কম বেশি সবার মাথায় খুশকি হয় কারো বেশি আর কারো কম। খুশকি হচ্ছে একটি সাধারণ বিষয় যা মাথার ত্বকের ত্বকে ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে। তাই এটি নিয়ে বেশি চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই এটি কোন সংক্রামক বা জটিল রোগ নয়।

যাদের মাথায় অতিরিক্ত খুশকি সমস্যা দেখা দেয়, যার কারণে মানুষের সামনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় তাদের জন্য খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই সবাই মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

খুশকি হওয়ার কারণ

খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানার আগে, খুশকি হওয়ার কারণগুলো জানা উচিত। প্রধানত ম্যালাসেজিয়া নামক এক ধরনের ছত্রাক এর কারণে খুশকি তৈরি হয়। আরো বিভিন্ন কারণে খুশকি হতে পারে, সাধারণত শীতকালের আবির্ভাব বেশি ঘটে। যাদের ত্বক শুষ্ক শীতকালে তাদের বেশি খুশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্তমান বাংলাদেশের পরিবেশগত দিক থেকে খুবই খারাপ পরিস্থিতি, এই পরিবেশ দূষণের কারণে মাথায় খুশকি হয়ে থাকে। বাইরে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে মাথায় ময়লা জমে খুশকি তৈরি করতে সাহায্য করে।

আবার মাথা পরিষ্কার না করার জন্য খুশকি হয়ে থাকে। অনেকের ভুল প্রোডাক্ট ব্যবহার করার কারণে চুলে খুশকি হয়ে থাকে। আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয় আর আপনি তৈলাক্ত ত্বকের শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ত্বককে আরও বেশি শুষ্ক করে ফেলবে যার ফলে তৈরি হবে খুশকি। আপনি যদি অ্যালার্জির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সাধারণত তরুণ বয়স থেকে মধ্য বয়স পর্যন্ত খুশকি হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এর মানে এই নয় যে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাথায় খুশকি হয়না, অনেকের সারাজীবন খুশকি সমস্যা নিয়ে জীবন পার করতে হয়।

খুশকি দূর করার উপায়

খুশকি দূর করতে হলে জীবনযাত্রার মাঝে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। চুলের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে এবং যত্নশীল হতে হবে। তাহলে খুশকি দূর করা সম্ভব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক খুশকি দূর করার উপায় গুলো

১। খাবারের পরিবর্তন আনুন

খুশকি হওয়ার পিছনে খাবারের ও হাত রয়েছে। কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো গ্রহণ করার ফলে খুশকি দেখা দিতে পারে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃম্যাক্রেন অ্যালেক্সিয়াডেস-আরমেনাকাসের মতে, দুর্বল বা পুষ্টিহীনতা খুশকি কারণ হতে পারে। আবার কিছু খাবার আছে যেগুলো গ্রহণ করলে খুশকির মাত্রা বেড়ে যায়। উচ্চ কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবারের ফলে ত্বকে গ্লাইকোজেন তৈরি হতে পারে যার থেকে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চিনিযুক্ত খাবার ও দুধ জাতীয় খাবার গুলোতে বেশি কার্বোহাইড্রেট থাকে যেগুলো আপনার ত্বকে আর তেল তৈরি করে। তাই আপনার যদি খুশকির প্রবণতা অনেক বেশি থাকে তাহলে কার্বোহাইড্রেট এবং শর্করা জাতীয় খাদ্য এড়িয়ে চলতে হবে।

২। চুল পরিষ্কার রাখা

অনেকে দেখা যায় নিয়মিত গোসল না করার কারণে চুল প্রতিদিন ধোয়া হয় না। যার কারণে মাথায় ময়লা জমে খুশকি তৈরি হয়। আবার অনেকের ত্বক  তৈলাক্ত হয় যার কারনে খুব সহজে মাথাই ময়লা গুলা জমা হয়ে খুশকি তৈরি করতে সাহায্য করে। তাই যাদের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত তাদের প্রতিদিন চুল পরিষ্কার করা উচিত।

৩। শ্যাম্পু ব্যবহার করুন

খুশকি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে শ্যাম্পু ব্যবহার করা অন্যতম কার্যকরী উপায়। খুশকি দূর করার জন্য অবশ্যই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ বাজারে দুই ধরনের শ্যাম্পু পাওয়া যায় একটি হচ্ছে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আরেকটি হচ্ছে শুষ্ক ত্বকের জন্য। এখন আপনার যদি তৈলাক্ত ত্বক হয়ে থাকে আর আপনি শুষ্ক ত্বকে ব্যবহার করার শ্যাম্পু ব্যবহার করেন, তাহলে উপকারের থেকে অপকারই বেশি হবে। তাই আপনার ত্বক অনুযায়ী অবশ্যই শ্যাম্পু ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন এবং শ্যাম্পু গায়ে লিখা দেখে নিশ্চিত হয়ে নেবেন।

সাধারণত ভাবের শ্যাম্পু সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করাই ভালো। কিন্তু আপনার ত্বক যদি অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয় তাহলে আপনার ত্বক অনুযায়ী সপ্তাহে ২-৩ দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।

৪। চা গাছের তেল

চা গাছের তেলের মাঝে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যা খুশকির বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিকারের কাজ করে।

আপনার শ্যাম্পুর সাথে কয়েক ফোঁটা চা গাছের তেল মিশিয়ে নিয়ে চুলের প্রয়োগ করুন, ভালো করে চুল  ম্যাসাজ করে প্রায় পাঁচ মিনিটের জন্য রেখে দিন তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য সপ্তাহে দুই বার এই পদ্ধতি পুনরাবৃত্তি করতে পারেন।

৫। লেবুর রস

খুশকির জন্য লেবুর রস একটি কার্যকর প্রতিকার যা দূর করতে খুবই সাহায্য করে। লেবুর রসে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড যা চুলের গোড়া থেকে খুশকির বিরুদ্ধে লড়াই করে। লেবুর রসে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রয়েছে যা খুশকি সৃষ্টিকারী ছত্রাক দূর করে এবং চুল পড়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অন্তত কার্যকারী, যা আপনার চুলকে বিশাল এবং শক্তিশালী দেখায়।

একটি বাটিতে লেবুর রস এবং দই ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি আপনার চুলে ভালো করে ম্যাসেজ করুন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট এই মিশ্রণটি চুলে রেখে দিন তারপর শ্যাম্পু দিয়ে আপনার চুল গুলো ধুয়ে নিন।

অথবা দু চামচ লেবুর রসের সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে। ভালো করে চুলে ম্যাসাজ করে, ৩০ মিনিটের মতো রেখে দিন তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল যথারীতি ধুয়ে ফেলুন।

ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার ব্যবহার করুন।

৬। নিম পাতার

ত্বক এবং চুলের যত্ন উভয়ের ক্ষেত্রে নিম পাতা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। মিম এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল যা মাথার জীবাণু দূর করতে ভালো কাজ করে। নিম পাতার রস আপনার মাথার ত্বককে ডিটিক্সফাই করতে সাহায্য করতে পারে এবং চুলের গোড়া মজবুত করে তুলে। ফ্লাকিনেসের জন্য দায়ী অতিরিক্ত তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রন করতে নিমের পাতার রস খুবই সাহায্য করে।

একটি পরিষ্কার বাটিতে নিম পাতা গুড়ো করে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। অথবা নিম পাতার রস আপনার চুলে প্রয়োগ করে ১০ মিনিটের মতন রেখে দিন। তারপর শ্যাম্পু করে চুল পরিষ্কার করে নিন।

মনে রাখবেন এটি দুই সপ্তাহে একবার ব্যবহার করতে হবে, এর বেশি ব্যবহার করা যাবে না।

৭। শেষ কথা

আজকে চেষ্টা করেছি চুলের খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার। আশাকরি খুশকি দূর করার উপায় এর আর্টিকেলটি সবার কাছে ভালো লাগবে এবং উপকারে আসবে। আপনার মাথায় যদি অতিরিক্ত খুশকি হয়, চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ খুশকি চুলের গোড়া হালকা করে ফেলে যা খুব সহজে চুল পড়ে যায়। তাই আপনার মাথায় অতিরিক্ত খুশকি হলে এটি যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Follow topics bangla facebook page

Topicsbangla

জানা ও অজানা বিষয় গুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরা আমাদের মূল লক্ষ।আমাদের সাথেই থাকুন আশা করি উপকৃত হবেন।☺☺

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button