Health Tips

দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপায়

ঘুম মানুষের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনিদ্রায় থাকা বা ঘুম কম হলে শারীরিকভাবে নানা সমস্যা দেখা এবং সারাদিন ক্লান্তি অনুভব হয় যার ফলে কাজে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। বর্তমান সময়ে মানুষের মধ্যে ঘুম না হওয়ার সমস্যাটি প্রবলভাবে বেড়ে চলছে। ঘুমের সমস্যাটি সমাধান করার জন্য মানুষ ঘুমের ওষুধ গ্রহণ করছে যা দীর্ঘদিন গ্রহণ করার কারণে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘুম না হওয়ার পিছনে দায়ী হচ্ছে বর্তমান আধুনিক ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার এবং আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের দিকে খেয়াল না রাখা। তাই আমি আজকে আপনাদের সাথে এমন কিছু টিপস শেয়ার করতে যাচ্ছি যেগুলো অনুসরণ করলে দ্রুত ঘুমিয়ে যেতে পারবেন। এই আর্টিকেলে আমি কিছু অজানা তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরব যেগুলো সম্পর্কে জানলে অনেক উপকৃত হবেন। তাই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপায় সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

রুমের অবস্থা ও তাপমাত্রা বজায় রাখুন

আপনি ঘুমিয়ে পড়ার সাথে সাথে আপনার শরীরের তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে। আপনি যখন বিছানায় শুয়ে থাকেন তখন আপনার শরীরের তাপমাত্রা ঠান্ডা হতে থাকে আর যখন উঠবেন তখন আস্তে আস্তে গরম হতে থাকে। তাই আপনার ভালো ঘুম হওয়ার জন্য প্রয়োজন ঠান্ডা রুম যদি আপনার ঘরটি খুব গরম হয় তাহলে আপনার ঘুমাতে সমস্যা হবে। গবেষকদের মতে আপনার রুমের তাপমাত্রা 60-67°F (15.6-19.4°C) মধ্যে থাকলে ভালো।

ভালো ঘুমের জন্য রুমের পরিবেশের দিকে নজর রাখতে হবে। আপনার বিছানা যথেষ্ট নরম কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখুন এবং সেটি যদি বেশি শক্ত হয় তাহলে আপনার ঘুমের অসুবিধা হতে পারে।

বিজ্ঞানীদের মতে রাতের বেলা আমাদের শরীরে মেলোটোনিন নামক একপ্রকার হরমোন নিঃসরণ হয় যেটা ঘুমের জন্য আপনার শরীরকে প্রস্তুত করেন। দিনের বেলা এই হরমোনটা বেশি নিঃসরণ হয় না যার ফলে আমরা দিনের বেলা জেগে থাকতে চাই।

রাতে ঘুমানোর সময় আপনার রুমের পর্যাপ্ত পরিমাণের অন্ধকার কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। এবং ঘুমানোর পূর্বে জানালা বন্ধ করে দিন বা পর্দা দিন এতে সকালের আলোতে আপনার ঘুম ভেঙ্গে যাবে না।

একটি সময়সূচি তৈরি করুন

প্রতিদিন একই সময় ঘুমানো এবং একই সময় ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। আপনার ঘুমের যদি সময়সূচি ঠিক না থাকে তাহলে আপনি চাইলেই দ্রুত ঘুমাতে পারবেন না।

আপনার শরীরে নিজস্ব নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা আছে যা সাকার্ডিয়ান রিদম বলা হয়। সময়সূচী অনুযায়ী আপনি ঘুমালে আপনার ব্রেন এটিকে সেট করে ফেলবে। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে উঠতে সাহায্য করবে। সময়সূচি এমনভাবে সেট করুন যাতে করে প্রতিরাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো নিশ্চিত হয় কারণ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের এর থেকে কম ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন

আমি মনে করি দ্রুত ঘুমানোর জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করাটি খুবই কার্যকরী উপায়। আপনার যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে একবার চেষ্টা করেই দেখুন কখন আপনি ঘুমিয়ে গেছেন সেটা বুঝতেই পারবেন না। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করার জন্য নিচের পদ্ধতি অবলম্বন করুন।

  • প্রথমে মুখ বন্ধ করে শুধু মাত্র নাক দিয়ে ৪ সেকেন্ড নিশ্বাস নিন
  • ৭ সেকেন্ড ধরে আপনারা দম বন্ধ করে রাখুন
  • এরপর আপনার মুখ খুলুন এবং সম্পূর্ণরূপে শ্বাস ছাড়ুন, একটি রূপ শব্দ করুন এবং মানসিকভাবে ৮ সেকেন্ড পর্যন্ত গণনা করুন অর্থাৎ ৮ সেকেন্ড ধরে আপনার মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন

এই ব্যায়ামটি চারবার পুনরাবৃত্তি করুন। এই ব্যায়াম করার পরে আপনার মনকে আরো শিথিল করতে পারে এবং ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে

দিনের বেলা ঘুম এড়িয়ে চলুন

সারারাত জেগে থেকে সারাদিন ঝিমানো বা ঘুমানো টা ঠিক নয়। আপনি যদি দিনের বেলা ঘুমান তাহলে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে পারবেন না এমন কি সারা রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে হতে পারে।

৪৪০ জন কলেজ ছাত্রীর উপর করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যারা প্রতি সপ্তাহে তিন বা তার বেশি দিন দিনের বেলা ২ ঘন্টার বেশি ঘুমিয়েছেন এবং যারা শুধুমাত্র সন্ধ্যার পর বা রাত্রে ঘুমান, তাদের ঘুম রাত্রেবেলা খুব ভালো হয়।

১৯৯৬ সালে আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে প্রাপ্তবয়স্ক লোকেরা দিনের বেলা ঘুমানোর কারণে রাতের বেলা ঘুম কম হয় এবং সারাদিন বিষন্নতার মধ্যে থাকে এবং তাদের শারীরিক কার্যকলাপ ব্যাঘাত ঘটে। আর যারা ঘন ঘন ঘুমান তাদের শরীরের ওজন অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।

খাওয়া-দাওয়ার এর উপর নজর দিন

খাওয়া-দাওয়ার উপর কিন্তু ঘুমানোর সম্পর্ক রয়েছে। ঘুমানোর আগে এমন কোন খাবার খাওয়া যাবে না যে আপনার ঘুমাতে সমস্যা তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ গবেষণায় দেখা গিয়েছে উচ্চককার্বযুক্ত খাবার রাতে বিশ্রামের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অপরদিকে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার একটি গভীর  ঘুমের জন্য খুবই কার্যকর।

ঘুমের কমপক্ষে ছয় ঘন্টা আগে কোন ক্যাফিন যুক্ত পানীয় পান করা যাবে না ও ক্যাফেন যুক্ত কোন খাবার গ্রহণ করা যাবে না। যেমনঃ চা, কফি, ডার্ক চকলেট এই জাতীয় খাবার গুলো খাওয়া যাবে না

দিনের বেলায় ব্যায়াম করুন

শরীর যখন ক্লান্ত হয়ে যায় তখন সেটি বিশ্রাম পেতে চাই আর বিশ্রামের জন্য মানুষ ঘুমায়। আপনার যদি সারাদিন কোন কাজ না থাকে আর সব সময় বিছানায় ঘুমিয়ে থাকেন তাহলে রাতে ঘুমানো টা আপনার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। সেজন্য প্রতিদিন ব্যায়াম করুন এবং বিকাল বেলা বাইরে হাটাহাটি বা কোন ধরনের খেলাধুলা করতে পারেন। এতে আপনার ঘুম ভালো হবে

ইলেকট্রনিক ডিভাইস এড়িয়ে চলুন

গভীর রাতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা ঘুমের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। টিভি দেখা, ভিডিও গেম খেলা, সেল ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে পেয়েছে আমরা যেই ইলেকট্রনিক ডিভাইস গুলো ব্যবহার করে সেগুলো থেকে যে নীল আলো নিগত হয় সেগুলো আমাদের মেলাটোনিন হরমোন দমন করে। আর আমাদের ঘুমের জন্য প্রয়োজন হয় মেলাটোনিন হরমোনের তাই গভীর রাত্রে বা ঘুমের পূর্বে ইলেকট্রনিক ডিভাইস এড়িয়ে চলুন।

সূর্যলোক এক্সপোজার বৃদ্ধি

আপনাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা সূর্যালোক এক্সপোজার বলতে আসলে কি বুঝায় তা জানেন না, আসুন বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিই।

আপনি কি জানেন দিনের বেলায় বেশি সূর্যলোক বা উজ্জ্বল আলোর সংস্পর্শে আসাও আপনাকে রাতে দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে উজ্জ্বল আলো আপনার সার্কেডিয়ান ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এর ফলে আপনার শরীর সিদ্ধান্ত নিতে পারে এটি ঘুমানোর সময় এবং জেগে ওঠার সময়।

তাই প্রতিদিন চেষ্টা করুন বাইরে রোদের আলোতে যাওয়ার এবং সন্ধ্যার মধ্যে ঘরে ফেরার আর ঘরে ফেরার পরে ঘর অন্ধকার করে রাখুন যাতে আপনার শরীর বুঝতে পারে এখন ঘুমানোর সময়।

ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করুন

প্রতিরাতে ভালো ঘুম দেওয়ার জন্য কিছু স্বাস্থ্য বিধি নিয়ম রয়েছে যেগুলো মেনে চললে দ্রুত ঘুমাতে পারবেন।

  • আপনি যখন ঘুমাচ্ছেন তখনই বিছানায় শুয়ে থাকবেন ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার সাথে সাথে বিছানা ত্যাগ করুন।
  • আপনার ঘুমাতে সমস্যা হলে বিছানা থেকে উঠে সেটি আরামদায়ক করে নিন
  • একটি কঠোর ঘুমের সময়সূচী বজায় রাখা।

আমরা যখন টিভি দেখি বা মোবাইল ব্যবহার করি তখন শুয়ে থেকে ব্যবহার করি। আমার পরামর্শ থাকবে আপনি যখন টিভি দেখবেন চেষ্টা করেন সোফায় বসে টিভি দেখার এবং মোবাইল ব্যবহার করার সময় বসে মোবাইল ব্যবহার করুন। সব সময় বিছানায় শুয়ে থাকলে ঘুমাতে সমস্যা হয়।

 

আজকে যতগুলো টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম সবগুলো মেনে চলার পরও যদি আশানুরূপ ফলাফল না পান তাহলে একজন ঘুম বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।  তিনি আপনার সঠিক কারণটি নির্ণয় করতে পারবে এবং তার চিকিৎসা করতে পারবে। ধন্যবাদ।

Follow topics bangla facebook page

আরো পড়ুনঃ

ডিলিট করা ফেসবুক পোস্ট কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় আসুন জেনে নেই

বিকাশে স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম

ঘরে বসে মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম করুন

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি? সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে আয় করুন।

ফেসবুক থেকে আয় করার উপায় গুলো সম্পর্কে জেনে নিন

Topicsbangla

জানা ও অজানা বিষয় গুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরা আমাদের মূল লক্ষ।আমাদের সাথেই থাকুন আশা করি উপকৃত হবেন।☺☺

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button