Computer Tips

পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে করণীয় গুলো কি?

অনেকের বাজেট কম থাকার কারণে বা অন্য কোন কারণে পুরাতন ল্যাপটপ ক্রয় করার প্রয়োজন হয়। যাদের বাজেট কম কিন্তু চাচ্ছেন ভালো কনফিগারেশনের ল্যাপটপ ক্রয় করতে, তাদের জন্য পুরাতন ল্যাপটপ ক্রয় করা সঠিক সিদ্ধান্ত। আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে পুরাতন ল্যাপটপ সবসময় একটি ভালো চুক্তি। এর কারণ হচ্ছে আপনি যখন কোন পুরাতন ল্যাপটপ ক্রয় করবেন, আপনি ল্যাপটপের আসল দাম থেকে প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ কম দামে সমস্ত ফিচার বা বৈশিষ্ট্য পাবেন।

পুরাতন ল্যাপটপ ক্রয় করার সময় বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা রাখতে হয়  কিছু জিনিস চেক করে নিতে হয় তাছাড়া প্রতারিত বা ধোকা খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে করনীয় গুলো কি? সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

এক পলকে সম্পুর্ন পোস্ট

নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন

যেহেতু ল্যাপটপের দাম বেশি সেক্ষেত্রে এর সাথে বড় পরিমাণের অর্থ জড়িত থাকে। তাই আপনার একটু ভুল সিদ্ধান্তের জন্য অনেক বড় বিপদে পড়তে পারেন।

যখন কোন ব্যক্তি থেকে ল্যাপটপ ক্রয় করবেন সে আসল মালিক কিনা সেটি যাচাই করুন। ল্যাপটপ ক্রয় করার সময় অনলাইন অথবা অফলাইনের ক্যাশ মেমো প্রদর্শন করতে বলুন। তাছাড়া আইনগত জটিলতা পড়তে পারেন।

যদি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ল্যাপটপ ক্রয় করেন ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নেবেন। বর্তমানে বেশ কিছু মানুষ ফেসবুকে ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ল্যাপটপ বিক্রয়  করার কথা বলে মানুষের সাথে প্রতারিত করছে। তাই ল্যাপটপ হাতে না পেয়ে  বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোন ধরনের টাকা পেমেন্ট করবেন না।

ম্যানুফাকচারী ব্র্যান্ড বা কোম্পানি নির্বাচন করুন

ল্যাপটপ ক্রয় করার সময় ব্র্যান্ডের দিকে খেয়াল রাখা উচিত। একটা ভালো ব্র্যান্ড নির্বাচন করুন। HP, lenovo, Dell, Asus এইসব জনপ্রিয় ব্র্যান্ড নির্বাচন করবেন এমন কোন ব্র্যান্ড নির্বাচন করবেন না যেগুলোর গুণগত মান ভালো না এবং পার্টস সহজে বাজারে পাওয়া যায় না।

অনলাইন পর্যালোচনা গুলি প্রথমে পরীক্ষা করুন

কোন ব্যক্তি বা দোকান থেকে যে মডেলের ল্যাপটপটি ক্রয় করার সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন। আপনার প্রথম কাজ হবে সেই ল্যাপটপের সম্পর্কে অনলাইনে পর্যালোচনা করা। অনলাইনে ল্যাপটপটির সম্পর্কে রিভিউ দেখে নিন। এটার কোন সমস্যা আছে কিনা এবং ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করে কতটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন। রিভিউ দেখার ফলে ল্যাপটপের সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং আপনার জন্য ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে।

ল্যাপটপের  বডি পরিদর্শন করুন

ল্যাপটপের বডির অবস্থা দেখে বুঝতে পারবেন এটি কতটা যত্ন সহকারে ব্যবহার করা হয়েছিল। ল্যাপটপটি যদি ভালোভাবে কাজ করে কিন্তু ল্যাপটপের বডির অবস্থা দেখে মনে হয় অনেক বড় আঘাত পেয়েছিল, এতে অভ্যন্তরীণ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, হয়তো কোন পার্টস পরিবর্তন করেছে যা আপনি জানেন না এর ফলে ল্যাপটপের আয়ু কমে যেতে পারে তাই এই ধরনের ল্যাপটপ ক্রয় করবেন না।

কিবোর্ড ও ট্র্যাকপ্যাড চেক করুন

আমরা সবাই জানি যে কিবোর্ড ও ট্র্যাকপ্যাড ল্যাপটপের সর্বাধিক ব্যবহৃত উপাদান। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ল্যাপটপের কিবোর্ড নষ্ট থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। একটি নোটপ্যাড ওপেন করে সেখানে কিবোর্ডের সবগুলো বাটন ব্যবহার করে পরীক্ষা করে নিন সবগুলো ঠিক আছে কিনা।

ট্রাকপ্যাড (অভ্যন্তরীণ মাউস)  ব্যবহার করে দেখুন সবকিছু ঠিক আছে কিনা। যেমনঃ পিঞ্চ টু জুম, দুই আঙ্গুলের মাধ্যমে স্কোল, তিন আঙুলের মাধ্যমে সোয়াইপ ইত্যাদি।

ডিসপ্লে চেক করুন

ভালোভাবে ল্যাপটপের ডিসপ্লে চেক করে নেবেন, কোন ধরনের ডেট পিক্সেল বা বলি লেখা আছে কিনা সেটি চেক করুন। ল্যাপটপের ডিসপ্লে চেক করার জন্য অনলাইনে অনেক ধরনের সাইট রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনার ডিসপ্লে চেক করতে পারবেন। সাইটগুলো গুগলে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।

ওয়্যারলেস সংযোগ গুলো পরীক্ষা করুন

বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ ওয়াইফাই এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। তাই ল্যাপটপ কেনার সময় খেয়াল রাখুন আপনার ওয়াইফাই ঠিকঠাক ভাবে কাজ করছে কিনা। ওয়াইফাই এর সাথে আপনার ল্যাপটপের সংযোগ করুন এবং সেটি ব্যবহার করুন।

ল্যাপটপের ব্লুটুথ চালু করে আপনার মোবাইলের সাথে কানেক্ট করে ব্যবহার করে দেখুন।

পোর্ট এবং সিডি /ডিভিডি ড্রাইভ পরীক্ষা করুন

আপনার ল্যাপটপের যতগুলো USB পোর্ট রয়েছে এবং হেডফোন জ্যাক, চার্জিং পোর্ট পরীক্ষা করে দেখুন।   HDMI, মেমোরি কার্ড স্লট এবং অন্যান্য যে পোর্ট বা ইনপুট রয়েছে সবগুলো পরীক্ষা করুন। এর মধ্যে অনেক ল্যাপটপের ইনপুট পোর্ট গুলো মাদারবোর্ডের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকে যা প্রতিস্থাপন করতে অনেক টাকা খরচ হয় তাই অবশ্যই ভালোভাবে সবকিছু চেক করে নেবেন যাতে পরবর্তীতে ঝামেলা পোহাতে না হয়।

ওয়েবক্যাম এবং স্পিকার চেক করুন

বর্তমানের প্রতিটি ল্যাপটপের সাথে ওয়েবক্যাম সংযুক্ত থাকে, যা ভিডিও কলে কথা বলতে সাহায্য করে। ক্যামেরাটা ওপেন করে চেক করুন ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা।

ল্যাপটপের মাধ্যমে নাটক, গান বা অন্য কোন ভিডিও বা অডিও শুনতে সাউন্ডের প্রয়োজন হয়। যদি আপনার ল্যাপটপের স্পিকার নষ্ট হয় তাহলে ভিডিও বা অডিও শোনা যাবে না। তাই কোন গান প্লে করে ল্যাপটপ স্পিকার চেক করে নিন।

ব্যাটারির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন

বিদ্যুৎ ব্যতীত আপনার ল্যাপটপ দীর্ঘসময় সচল রাখতে ব্যাটারির প্রয়োজন হয়। ড্যামেজ ব্যাটারীর ব্যাকআপ বেশি সময় পাওয়া যায় না যার কারণে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তাই ল্যাপটপ ক্রয় করার সময় ব্যাটারির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিবেন এর অবস্থা বর্তমান কেমন আছে।

ল্যাপটপের ব্যাটারির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন

  • WINDOWS 10  সার্চ বারে CMD  লিখুন
  • যদি কোন পারমিশন চায় সেটি দিন
  • তারপর “powercfg/batteryreport” টাইপ করুন
  • তারপর ENTER  বাটনের চাপ দিন

উপরের ধাপগুলো ঠিকভাবে করার পর আপনার ব্যাটারির রিপোর্ট একটি ফাইলে সংরক্ষণ হব। ফাইলটি হচ্ছে C:\WINDOWS\SYSTEM32\BATTERY-REPORT

প্রয়োজন অনুযায়ী প্রসেসর নির্বাচন করুন

ভালো পারফরম্যান্স পেতে চাইলে অবশ্যই ভালো প্রসেসর  যুক্ত ল্যাপটপ ক্রয় করতে হবে কারণ প্রসেসর পারফরম্যান্স পেতে মূল ভূমিকা পালন করে।

বর্তমান সময় অনুযায়ী আপনি যদি Amd Ryzen এর প্রসেসর নিতে চান তাহলে 2nd gen প্রসেসর নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আর Inter  এর প্রসেসর নিলে কমপক্ষে 7th  gen এর প্রসেসর নেওয়ার চেষ্টা করবেন। সর্বশেষ লেটেস্ট প্রসেসার গুলো সব সময় ভালো হয়ে থাকে।

ল্যাপটপের প্রসেসর কত জেনারেশন এবং কোন প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে সেটি চেক করার জন্য। This Pc  উপরে মাউস নিয়ে মাউসের রাইট বাটনে ক্লিক করার পর properties নামের একটা অপশন পাবেন সেখানে ক্লিক করলেই প্রসেসরের ডিটেলস জানতে পারবেন।

হার্ড ড্রাইভের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন

হার্ড ড্রাইভের  অবস্থা যদি ভালো না হয় তাহলে নানা ধরনের সমস্যা পড়তে হয়। যেমনঃ কোন কিছু সেভ করতে সময় লাগে, ফাইলগুলো ওপেন হতে সময় লাগে, ঘন ঘন কম্পিউটার ক্র্যাশ হয়।

তাই একটি এসএসডি বা এইচডিডি তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা তাদের তাপমাত্রা একটি গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যে রয়েছে কিনা এই সমস্ত বিষয়গুলো পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

আপনি হার্ড ড্রাইভের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যেকোনো ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। আপনি চাইলে CrystalDiskInfo সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারেন এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্য।

Download Now

সফটওয়্যারটি ওপেন করার পর যদি আপনার হার্ড ড্রাইভের Health Status: good হলে ভালো। আর তাপমাত্রা ৩০° এবং ৫০°  এর মধ্যে হওয়া উচিত যদি ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা হয় তাহলে হার্ড ড্রাইভের অবস্থা ভালো নেই।

Ram ক্যাপাসিটি/ আপডেট সুবিধা চেক করুন

Ram হচ্ছে আপনার ল্যাপটপের স্বল্প মেয়াদি মেমোরি। অনেকগুলো সফটওয়্যার একসঙ্গে ইস্মুত ভাবে ব্যবহার করার জন্য বেশি Ram এর প্রয়োজন হয়। তাই কমপক্ষে ৮ জিবি ram নিন।

বর্তমান সময়ের সর্বশেষ র‌্যামের ভার্সন হচ্ছে ddr4 তাই চেষ্টা করুন ddr4 যুক্ত ল্যাপটপ ক্রয় করতে। এবং বেশি mhz এর ram নিন কারণ যত বেশি Mhz হবে তত দ্রুত সম্পূর্ণ Ram হবে

চেক করে দেখুন Ram  জন্য এক্সট্রা স্লট আছে কিনা। এক্সট্রা স্লট থাকলে পরবর্তিতে  Ram এর পরিমাণ বাড়ানো যাবে।

ল্যাপটপের সামগ্রিক বয়স পরীক্ষা করুন

কতদিন যাবত ল্যাপটপটির ব্যবহার হচ্ছে সেটা অবশ্যই আপনার জানা উচিত। বেশিদিন ব্যবহারকৃত ল্যাপটপের নানা ধরনের সমস্যা থাকার সম্ভাবনা থাকে। তাই ৫-৬ বছরের অধিক ব্যবহৃত ল্যাপটপ ক্রয় করা থেকে বিরত থাকুন।

ল্যাপটপের সামগ্রিক বয়স পরীক্ষা করতে নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করুন

PC HEALTH CHECK নামের সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করুন

Download Now 

সফটওয়্যারটি ইন্সটল করার পরে ল্যাপটপটি কত বছরের পুরাতন সেটি বাম পাশে দেখতে পারবেন। এবং কত জিবি Ram ও Buttery Capacity কত পার্সেন্ট সহ আরো অনেক বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাবেন।

৩০ মিনিটের বেশি সময় ব্যবহার করুন

পুরাতন ল্যাপটপ ক্রয় করতে গেলে অবশ্যই হাতে সময় নিয়ে যাবেন। ত্রিশ মিনিট যাবত ল্যাপটপটি ভালো মতে ব্যবহার করে দেখুন। কোন ভারী যুক্ত কাজ করুন যেমন গেমিং করতে পারেন। ল্যাপটপে যদি কোন গেম ইন্সটল করা না থাকে তাহলে অনলাইনে মাধ্যমে গেমস খেলা যাই সেখান থেকে গেমস খেলতে পারেন

আরো পড়ুনঃ অনলাইন গেম খেলুন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে

৩০ মিনিট গেমস বা অন্য কোন ভারী কাজ করার সময় হিসাব করুন কত মিনিট এ কত পারসেন্ট চার্জ যাচ্ছে। তাহলে আপনার ল্যাপটপের ফুল চার্জ থেকে কত খানি ব্যাকআপ পাবেন সেই হিসাব পেয়ে যাবেন।

তারপর লক্ষ্য করুন ল্যাপটপটি গরম হচ্ছে কিনা পুরাতন ল্যাপটপের হিটিং ইস্যু বেশি থাকে। যদি আপনার কাছে মনে হয় অতিরিক্ত গরম হচ্ছে তাহলে সেই ল্যাপটপটি এড়িয়ে চলাটাই ভালো। কারণ অতিরিক্ত হেটিং হলে প্রসেসর বা মাদারবোর্ডের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নিশ্চিত করুন যে আপনি একটি ভালো চুক্তিতে আবদ্ধ হচ্ছেন

সর্বশেষ খেয়াল করুন আপনি ভাল একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হচ্ছেন কিনা। আপনি যদি কোন দোকান বা প্রতিষ্ঠান থেকে পুরাতন ল্যাপটপ ক্রয় করেন তাহলে অবশ্যই সে ল্যাপটপের কত বছর সার্ভিসিং ওয়ারেন্টি বা অন্য কোন সুযোগ সুবিধা গুলো দিচ্ছে সেই সম্পর্কে ভালোভাবে কথা বলে নেবেন। এবং আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যাচাই বাছাই করে নেবেন আপনার কাছে যেই প্রতিষ্ঠান সবথেকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে এবং কাস্টমারদের ভালো সার্ভিস দিচ্ছে। তাদের থেকেই ল্যাপটপ ক্রয় করা সিদ্ধান্ত নিন।

আর যেই ল্যাপটপটি ক্রয় করবেন তার বাজার মূল্যর সাথে কতটুকু কম দামে ক্রয় করতে পারছেন সেদিকেও লক্ষ্য রাখবেন।

Follow topics bangla facebook page

Topicsbangla

জানা ও অজানা বিষয় গুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরা আমাদের মূল লক্ষ।আমাদের সাথেই থাকুন আশা করি উপকৃত হবেন।☺☺

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button