Islamic zone

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জেনে নিন

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জেনে নিয়ে সঠিক নিয়মে নামাজ আদায় করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।তাহাজ্জুদ নামাজ মুসলিমদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ নফল ইবাদত। এটি রাতের একাংশে আদায় করা হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। তাহাজ্জুদ নামাজ মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় ইবাদতগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল, এবং তিনি এই নামাজকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। কোরআনে আল্লাহ তাআলা নিজেই তাহাজ্জুদের প্রশংসা করেছেন এবং এর বিশেষ ফজিলতের কথা উল্লেখ করেছেন।আজকের ব্লগে আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানতে পারবো।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রাকাআত নেই। তবে হাদিসে প্রমাণিত যে মহানবী (সা.) সাধারণত ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন তারপর বিতর নামাজ পড়তেন। তবে কমপক্ষে ২ রাকাআত পড়া যায় এবং ইচ্ছা করলে বেশি রাকাআতও পড়া যেতে পারে।তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিন্মরূপ-

  • ঘুম থেকে ওঠা- তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের পূর্বে কিছুক্ষণ ঘুমানো উত্তম। তবে যদি কেউ ঘুমাতে না পারেন তবুও ইশার নামাজের পর তাহাজ্জুদের নিয়ত করে নামাজ আদায় করা যাবে।
  • নিয়ত- নামাজ শুরু করার আগে তাহাজ্জুদের নিয়ত করতে হবে। তাহাজ্জুদ একটি নফল নামাজ তাই মনে মনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এই নামাজ আদায়ের নিয়ত করলেই যথেষ্ট।
  • তাহাজ্জুদের রাকাআত সংখ্যা- সর্বনিম্ন ২ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায়। কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। সাধারণত ৮ রাকাআত পড়া উত্তম। হযরত মুহাম্মদ (সা.) অধিকাংশ সময় ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন এবং এর পরে ৩ রাকাআত বিতর নামাজ আদায় করতেন। তবে কারও ইচ্ছা হলে তিনি ১০, ১২ বা আরও বেশি রাকাআত পড়তে পারেন।
  • সুরা পাঠ- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এর মধ্যে সুরা পাঠ করা অন্যতম।তাহাজ্জুদ নামাজে সুরা ফাতিহা পড়ার পর কোরআনের যে কোনো অংশ থেকে সুরা বা আয়াত তিলাওয়াত করা যায়। দীর্ঘ সুরা বা আয়াত পাঠ করা উত্তম যেমন- সুরা বাকারা, সুরা আল ইমরান ইত্যাদি। তবে যদি কেউ দীর্ঘ সুরা পড়তে অক্ষম হন তবে ছোট সুরাও পড়তে পারেন।
  • দোয়া ও কান্না- তাহাজ্জুদ নামাজের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটি একান্ত সময়ের ইবাদত যখন বান্দা আল্লাহর সাথে একান্তে কথা বলে। এ সময় আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহ মাফ চাওয়া, দোয়া করা এবং আল্লাহর দরবারে নিজেদের প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করা উচিত। আল্লাহ তাআলা এই সময়ে বান্দার দোয়া সবচেয়ে বেশি কবুল করেন। দোয়া করার সময় আল্লাহর ভয়ে কান্না করা খুবই ফজিলতপূর্ণ।

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম মেনে নামাজ আদায় করলে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত জানা যায়।তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, “তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় এবং আশা নিয়ে ডাকে এবং তাদেরকে আমি যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে দান করে” (সূরা সিজদা, ৩২:১৬)। এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে রাতের ইবাদতকারী আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।হাদিসে নবী (সা.) বলেন, “তোমরা রাতে নামাজ পড়ো যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। তখন তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে” (তিরমিজি)।আরেকটি হাদিসে এসেছে, “আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পাঁচটি ইবাদত আছে-তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হল রাতে নামাজ পড়া” (মুসলিম)।

তাহাজ্জুদ নামাজের প্রস্তুতি

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এর মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের প্রস্তুতি অন্যতম।তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের জন্য কিছু প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে যা সাহায্য করবে নামাজের প্রতি নিয়মিত থাকতে।

  • দিন শেষে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে রাতের একাংশে ওঠার জন্য মনকে প্রস্তুত করা উচিত। শারীরিক ও মানসিকভাবে সতেজ থাকতে রাতের প্রথম দিকে ঘুমানো যেতে পারে।
  • ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর স্মরণ করা, এবং “আলহামদুলিল্লাহ” বলে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
  • তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য ওজু করে পবিত্র হতে হবে। যদি সম্ভব হয়, মিসওয়াক ব্যবহার করে দাঁত পরিষ্কার করা ভালো।
  • তাহাজ্জুদ নামাজের সময় মনোযোগসহকারে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়া উচিত।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জেনে নামাজ আদায়ের জন্য নামাজের সময় জেনে নেওয়াও খুব জরুরি।তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের অন্ধকারে বিশেষ করে ঘুম থেকে উঠে আদায় করতে হয়। ইশার নামাজের পর থেকে ফজরের সময় পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায়। তবে উত্তম সময় হল রাতের শেষ তৃতীয়াংশে কারণ এই সময়ে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত পৃথিবীর নিকটবর্তী হয় এবং তিনি বান্দার দোয়া কবুল করেন। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, “রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছে যে আমাকে ডাকে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে? আমি তাকে ক্ষমা করব” (বুখারি)।

Shakiul Hasan

Hey everybody! I blog on everything and anything that spikes any hint of interest in me! Do check my blogs out

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button