সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার সময় এই ভুলগুলো করা যাবে না
সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা জরুরি যাতে আপনি একটি ভালো মানের ফোন পান এবং পরবর্তী সময়ে সমস্যায় না পড়েন।আজকের ব্লগে আমরা সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার সময় বিবেচ্য বিষয় গুলো জানতে পারবো।
এক পলকে সম্পুর্ন পোস্ট
সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার সময় বিবেচ্য বিষয়
পুরাতন মোবাইলে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা থাকে। কারণ এটি পূর্বে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তাই পুরাতন মোবাইল ক্রয় করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল ক্রয় করার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে ভালো মোবাইল ক্রয় করা যায়। আমি আপনাদের সামনে সেই বিষয়গুলোই তুলে ধরবো যেগুলো অনুসরণ করলে মোবাইল ক্রয় করে প্রতারিত ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না।
বাজেট নির্ধারণ
সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার আগে প্রথম যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো আপনার বাজেট। নতুন মোবাইলের তুলনায় সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল তুলনামূলকভাবে সস্তা হয় কিন্তু তার মানেও এমন নয় যে সব মোবাইল ভালো অবস্থায় থাকবে। তাই আপনার বাজেট অনুযায়ী ভালো মানের ফোন বাছাই করতে হবে। সাধারনত নামি ব্র্যান্ডের পুরোনো মডেলগুলোর দাম কম হলেও তা বেশ কার্যকরী হতে পারে।
ফোনের অবস্থা যাচাই
সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মোবাইলের শারীরিক অবস্থা। বাইরে থেকে দেখতে নতুন লাগলেও ভেতরের যন্ত্রাংশের অবস্থা খারাপ হতে পারে। তাই কিনতে যাওয়ার আগে ফোনের শরীর ও স্ক্রিনে কোনও দাগ বা ফাটল আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিন। ব্যাটারি ব্যাকআপও দেখুন কারণ পুরোনো ফোনের ব্যাটারির ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার পরীক্ষা
পুরোনো মোবাইল কেনার সময় সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফোনের বিভিন্ন ফিচার যেমন- ক্যামেরা, স্পিকার, সেন্সর, এবং টাচ স্ক্রিন ঠিকমত কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। সিম কার্ড ইনসার্ট করে নেটওয়ার্ক ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেটিও দেখে নেওয়া প্রয়োজন। ফোনের প্রসেসর ও র্যাম ঠিকমতো পারফর্ম করছে কিনা তা দেখতে ফোনটি চালিয়ে দেখুন।
IMEI নম্বর যাচাই
প্রতিটি মোবাইলের একটি অনন্য IMEI (International Mobile Equipment Identity) নম্বর থাকে। এটি যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ মোবাইলটি চুরি হওয়া কিনা বা অবৈধভাবে আমদানি করা কিনা তা এই নম্বরের মাধ্যমে জানা যায়। মোবাইলের সেটিংস থেকে বা *#06# ডায়াল করে IMEI নম্বর চেক করে নিন এবং এটি সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে যাচাই করুন।
ফোনের বয়স ও ব্যবহারের সময়কাল
সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার আগে জেনে নিন ফোনটি কতদিন ধরে ব্যবহার করা হয়েছে। ফোনের বয়স বেশি হলে সেটির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। সাধারণত ২-৩ বছরের বেশি ব্যবহৃত ফোনগুলোর কার্যক্ষমতা কমে যায় তবে ফোনের ব্র্যান্ড ও মডেলের ওপর এটি নির্ভর করে।
ব্যাটারির ক্ষমতা ও স্থায়িত্ব
সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার আগে ব্যাটারির ক্ষমতা যাচাই করা খুবই প্রয়োজনীয়।পুরোনো ফোনের ব্যাটারি সাধারণত নতুন ফোনের চেয়ে দ্রুত শেষ হয়ে যায়। ব্যাটারি যদি ভালো অবস্থায় না থাকে তাহলে সেটি পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে যা অতিরিক্ত খরচের বিষয়। ব্যাটারি টেস্ট করতে পারেন ফোনের সেটিংসে গিয়ে ব্যাটারি হেলথ চেক করে। যদি ব্যাটারি হেলথ ৮০ শতাংশের নিচে থাকে তবে সেটি পরিবর্তন করা দরকার।
অরিজিনাল চার্জার ও অন্যান্য এক্সেসরিজ
সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কিনলে অরিজিনাল চার্জার, ইয়ারফোন এবং অন্যান্য এক্সেসরিজ পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় অরিজিনাল এক্সেসরিজ না থাকায় ফোনটি ঠিকভাবে চার্জ হতে পারে না বা চার্জিং পোর্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চার্জার এবং অন্যান্য এক্সেসরিজের সঠিকতা পরীক্ষা করে নিন।
মোবাইলের ওয়ারেন্টি
অনেক পুরোনো মোবাইলে ওয়ারেন্টি থাকে না তবে কিছু ফোনে আংশিক ওয়ারেন্টি থাকতে পারে। সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার সময় ওয়ারেন্টি রয়েছে কিনা তা যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে ফোনের যন্ত্রাংশ পরিবর্তন বা মেরামতের সুবিধা পাওয়া যায়। যদি ওয়ারেন্টি থাকে তবে ফোনটির কাগজপত্র যাচাই করে নিন।
রিসেট করা আছে কিনা
সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার সময় সবসময় চেক করতে হবে যে ফোনটি ফ্যাক্টরি রিসেট করা আছে কিনা। ফ্যাক্টরি রিসেটের মাধ্যমে পূর্বের সব ডেটা মুছে যায় ফলে আগের ব্যবহারকারীর তথ্য থেকে আপনি মুক্ত থাকবেন এবং নতুন ব্যবহারকারী হিসেবে ফোনটি ব্যবহার করতে পারবেন।
বিক্রেতার বিশ্বাসযোগ্যতা
যেখান থেকে মোবাইলটি কিনছেন সেই বিক্রেতার উপর আস্থা রাখা জরুরি। ভালো এবং নির্ভরযোগ্য বিক্রেতার কাছ থেকে ফোন কিনলে প্রতারণার ঝুঁকি কম থাকে। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে অনেক প্রতারক থাকতে পারে তাই মোবাইল কেনার আগে বিক্রেতার রিভিউ এবং রেটিং দেখে নিন। প্রয়োজনে পরিচিত কাউকে দিয়ে যাচাই করিয়ে নিতে পারেন।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং সরাসরি ক্রয়
অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন বিক্রয় ডটকম, অলিক্স এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম থেকে পুরাতুন মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। সরাসরি ক্রয়ের সময় বিক্রেতার সাথে দেখা করে ফোনটি ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রতারণার ঝুঁকি থাকায় টাকা লেনদেন করার আগে নিশ্চিত হন যে ফোনটি আপনার চাহিদা পূরণ করছে।
দাম যাচাই
সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইলের দাম যাচাই করার জন্য কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে খোঁজ নিয়ে তুলনা করা উচিত। একই মডেলের ফোনের দাম বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন হতে পারে। এছাড়া বাজারদর অনুযায়ী ফোনের মূল্য ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করুন। যদি ফোনের দাম অস্বাভাবিকভাবে কম হয় তবে সেটি প্রতারণা হতে পারে।
ফোনের স্টোরেজ এবং মেমোরি
মোবাইলের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি এবং মেমোরি চেক করে নিন। আপনার প্রয়োজনীয় অ্যাপস ও ডেটা সংরক্ষণের জন্য যথেষ্ট জায়গা আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। যদি ফোনে স্টোরেজ বাড়ানোর অপশন থাকে তবে সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত।
মোবাইল আপডেট এবং সফটওয়্যার সাপোর্ট
মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট পাবে কিনা তা যাচাই করুন। বিশেষত অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলোর ক্ষেত্রে নিয়মিত আপডেট না পাওয়া ফোন কিনলে সিকিউরিটি সমস্যা হতে পারে। অ্যাপল ফোনের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় সফটওয়্যার আপডেট পাওয়া যায় তাই iPhone কিনতে চাইলে এটি একটি ভালো বিষয় হতে পারে।
ফোনের নিরাপত্তা ফিচার
স্মার্টফোনে থাকা বিভিন্ন নিরাপত্তা ফিচার যেমন- ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেস আনলক বা পাসওয়ার্ড সিস্টেম ঠিকমত কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। এসব ফিচার ফোনের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি তাই সেগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা দেখে নিন।
সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার সময় উল্লিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে আপনি একটি ভালো মানের মোবাইল ফোন কিনতে পারবেন। মনে রাখবেন পুরোনো ফোন কেনার সময় একটু বাড়তি সতর্কতা আপনাকে ভবিষ্যতের ঝামেলা থেকে রক্ষা করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
মোবাইল হারিয়ে গেলে খুজে পাওয়ার উপায় গুলো দেখে নিন