Information

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশের বর্তমান অবস্থা

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগের দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। পদত্যাগের পর দুপুরে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে যান তিনি। এদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ

২০০৯ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশের দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তারপর গত ১৬ বছরে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোতেও জয়ী হয়েছেন তিনি এবং তার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, তবে সেসব নির্বাচনের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ।গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির ওয়েবসাইটে খবর প্রকাশ করা হয়। ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ শিরোনামে ওই খবরে বলা হয়, সরকারবিরোধী বিক্ষোভে কয়েক শ মানুষ নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তাকে ও তার বোনকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার ওয়েবসাইটের খবর দীর্ঘ সময় শীর্ষস্থানে রাখা ছিল। ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, দায়িত্ব নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার’ শিরোনামের খবরে বলা হয়, কয়েক সপ্তাহের প্রাণঘাতী বিক্ষোভের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

 

শেখ হাসিনার পদত্যাগে বিশ্বনেতারা যা বললেন

প্রবল জনবিক্ষোভের মুখে হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। তারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে যতদ্রুত সম্ভব দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান।

  • জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনসহ বাংলাদেশের উন্নয়ন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি সব পক্ষকে শান্ত ও সংযমের আহ্বান জানান। একটি শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও গণতান্ত্রিক পথ উত্তরণের ওপর জোর দেন।
  • ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণ স্থানান্তর খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাদের নির্বিচারে আটক করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত।
  • ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের প্রতিনিধি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশে যে সহিংসতা আমরা দেখেছি ও তা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ শিক্ষার্থী, শিশু ও আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাসহ সবার প্রাণহানির ঘটনা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি গণতন্ত্রের অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে এবং বাংলাদেশের জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
  • মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, ‘আমরা সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। গত কয়েক সপ্তাহে অনেক প্রাণ ঝরেছে। আমরা সামনের দিনগুলোতে শান্তি ও সংযমের আহ্বান জানাচ্ছি। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যে কোনো পরিবর্তন পরিচালনার আহ্বান জানাচ্ছি।
  • যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট মেজরিটি লিডার চাক শুমার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বৈধ প্রতিবাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহিংস প্রতিক্রিয়া তার নেতৃত্বের প্রতি মানুষের সমর্থন তুলে দিয়েছে। আমি সাহসী আন্দোলনকারীদের প্রশংসা করছি ও একই সাথে নিহতদের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। সকলের অধিকারকে সম্মান করে এবং দ্রুত গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজন করে এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ।’

শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর দেশের বর্তমান অবস্থা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। অসংখ্য মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন। বেলা আড়াইটার দিকে তারা গণভবনে ঢুকে হাত উঁচু করে উল্লাস করতে থাকে। বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত গণভবনে অবস্থান করে অনেককেই ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে আসতে দেখা যায়। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পর পতনের পর এখন বাংলাদেশে দ্রুত শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির সঙ্গে আলাপে এই অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে বলেন, দ্রুত শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা না গেলে এর প্রভাব দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং মিয়ানমারে পড়তে পারে। ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশ শান্তির পথে এগোচ্ছে। কিন্তু এখন আনন্দ-উৎসব করতে গিয়ে যাতে পরিস্থিতির অবনতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।গত ৫ই আগস্ট সোমবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ মঙ্গলবার থেকে দেশের সব সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।ড. ইউনূসও একই বার্তা দিয়েছেন, বিজয় উদযাপনের পর সবাইকে ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। আর (মঙ্গলবার) সকাল থেকে সব স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া উচিৎ।

Follow topics bangla facebook page

আরো পড়ুনঃ

ডিলিট করা ফেসবুক পোস্ট কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় আসুন জেনে নেই

বিকাশে স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪

বিকাশে স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম

Shakiul Hasan

Hey everybody! I blog on everything and anything that spikes any hint of interest in me! Do check my blogs out

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button