বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪
- বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের সকল সরকারি চাকুরিরে কোটা সংস্কার করার দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন। ২০২৪ সালের ৫ ই জুন তারিখে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ থেকে আদায়কৃত ২০১৮ সালের পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষনার ফলে বাংলাদেশের ছাত্ররা এই আন্দোলন শুরু করে। শুরুর দিকে আন্দোলন সভা সমাবেশ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করলেও ২০২৪ সালের ১৪ই জুলাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করা একটি বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা আরো বড় আকারে আন্দোলনের সূচনা করে। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন” মুক্তিযোদ্ধার নাতী নাতনী রা সুযোগ পাবেনা তো রাজাকারের নাতী নাতনী রা পাবে”। এতে ছাত্র ছাত্রীরা সেই ১৩ই জুলাই রাতে ঢাকার রাজপথে নেমে পরে এবং স্লোগান দেয় ” তুমি কে, আমি কে? রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে, কে বলেছে? স্বৈরাচার সরকার”।এবং আরো স্লোগান দেয় ” চাইতে গেলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার”।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন
কোটা আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা । এই আন্দোলনে ছাত্র ছাত্রীদের একত্র করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভূমিকা রেখেছে। এরপর কমিটি নির্ধারন করে সমন্বয়ক রা আরো জোরদার ভাবে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়।এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি গুলো ছিলো -সরকারি চাকুরিতে কার্যকর কোটা পদ্ধতি বাতিল,গোষ্ঠী এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ন্যায্য হারে কোটা প্রদান করা ,কোটা সর্বোচ্চ ৫% এ নামিয়ে সংসদে নতুন আইন পাশ করানো।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়
১০ ই জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সবাই একত্রে জড়ো হয়ে শাহবাগে গিয়ে সবাই অবরোধ কর্মসূচী পালন করে। আন্দোলনে আইন শৃংখলা বাহীনি বাধা দেয়।দুপুরে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে এটি ৪ সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়। ১১ই জুলাই বিকাল ৪.৩০ মিনিটে আবার তারা আবরোধ কর্মসূচী পালন করে। পুলিশ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ায় তারা পিচিয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসে দাঁড়ায় এবং তারা একত্রিত হয়ে শাহবাগে আন্দোলন শুরু করে। এদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা করে। পুলিশদের হামলার প্রতিবাদে ১২ই জুলাই বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষনা দেওয়া হয়। ১২ ই জুলাই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা আন্দোলন করলে ছাত্রলীগের একদল কর্মী তাদের ওপর হামলা করে।১৪ই জুলাই আন্দোলন করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের মেয়েরা তালা ভেঙ্গে রাস্তায় নেমে পরে। এদিন রাত ১১ টায় চট্টগ্রাম বিষ্ববিওদ্যালয়ের সাধারন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়। ১৫ই জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে ও রাজু ভাস্কর্য এর সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের ছেলেরা লাঠি রড এবং বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এবং এতে প্রায় ২০০ এর অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়।যারা আহত হয় তাদের সকলকেই ঢাকা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধায় প্রায় ২০-২৫ জন ছাত্রলীগের ছেলেরা মেডিকাল কলেজে ঢুকে আহত শিক্ষার্থীদের ওপর ফের হামলা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতে ৪জি নেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৬ই জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত ২ টায় ছাত্রলীগের ছেলেরা আক্রমন করলে সবাই উপাচার্যের বাসভবনে আশ্রয় নেয়। এই আক্রমনে বহিরাগত ছাত্রলীগের প্রায় ২ শতাধিক নেতা কর্মী অংশ নেয় বলে জানা যায়।রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও সারারাত আন্দোলন চালিয়ে যায়।১৬ই জুলাই সকালে সারা দেশের ছাত্র ছাত্রীরা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়। পাবলিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সহ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে অংশ নেয়। পুলিশ এবং ছাত্রলীগের ছেলেরা সাধারন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এতে অনেকে আহত হয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ গুলি চালায় এতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ গুরুতর আহত হয়। আহত অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রথম শহীদ হয় আবু সাঈদ।এতে করে শিক্ষার্থীরা আরো চরম ভাবে বিক্ষোভে ফেটে পরে। অন্যদিকে চট্টগ্রামেও আন্দোলনে দুই জন নিহত হয়। এতে করে সারা দেশে সংঘাত ছড়িএ পরে। এইচ এস সি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ১৭ই জুলাই সারাদেশে সকল ধরনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার।বেগম রোকেয়া হল থেকে সকল ছাত্রলিগের নেত্রীদের বের করে দেয় সাধারন ছাত্রীরা।এবং সকাল ১০ তার মধ্যে সব হলের নিয়ন্ত্রন সাধারন ছাত্রদের হাতে চলে আসে।এদিন পুলিশ এবং ছাত্রদের হামলায় নিহিচ ছাত্রদের জন্য রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজা নামাজে অংশগ্রহন করে সাধারন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ সেখানেও বাধা দেয়।এরপর উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে ছাত্ররা আন্দোলন করলে সেখানেও পুলিশ হামলা করে রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ১৮ জুলাই সারাদেশে সাট ডাউন ঘোষনা করে সরকার। এবং সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করে।হল গুলোও বন্ধ ঘোষনা করা হয়।এবং সেইদিন রাত থেকে সারাদেশে সকল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। কোটা আন্দোলনের নিহতদের স্বরনে প্রথম শহীদ বেদি স্থাপন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯শে জুলাই সারা দেশে বর্ডার সেনা মোতায়ন করা হয়। কিন্তু এতেও কিছুতেও শিক্ষার্থীদের থামানো যায় না। শিক্ষার্থিদের আন্দোলন ঠেকাতে সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়।মধ্য রাতে ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম কে আটক করা হয়। এরপর ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রা ৮ দফা দাবি জানান সরকারের নিকট। ২১শে জুলাই সকাল ১০ টায় ১৬ ই জুলাই করা লিভ টু আপিলের শুনানি শুরু হয়। দুপুর ১ টায় রায় ঘোষনা দেয়া হয় এবং হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করা হয় এবং সরকারি চাকুরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ চাকুরি প্রদানের ঘোষনা দেওয়া হয়।এদিন বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রনে ঢাকায় র্যাব পুলিশ বিজিবি অভিযান চালায় এবং অনেকজন কে আটক করে।এরপর বৈষম্যহীন ছাত্র আন্দোলন ৯ দফা দাবী জানায় ও সারাদেশে সাটডাউন ঘোষনা করে।
এই ছাত্র আন্দোলনে অনেকজন শহীদ হয়।প্রতিবেদন অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে রয়েছে
- আবু সাঈদ (২২) — বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
- মো. ফারুক — একটি আসবাবের দোকানের কর্মচারী ছিলেন।
- ওয়াসিম আকরাম — চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
- ফয়সাল আহমেদ শান্ত (২৪) — ওমরগনি এম.ই.এস কলেজের ছাত্র ছিলেন।
- মো. শাহজাহান (২৫) — তিনি নিউমার্কেট এলাকার হকার ছিলেন।
- সবুজ আলী (২৫) — ঢাকা কলেজ পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন।
- সিয়াম (১৮) — তিনি গুলিস্তানের একটি ব্যাটারির দোকানের কর্মচারী ছিলেন।
- আসিফ ও সাকিল — নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
- দিপ্ত দে — মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
- দুলাল মাতবর — গাড়ি চালক।
- ফারহান ফাইয়াজ — ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।
- ইয়ামিন — মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির।
- মো. জিল্লুর শেখ — ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজ।
- শাইখ আশহাবুল ইয়ামিন — মিরপুর এমআইএসটির কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী
- হাসান মেহেদী — নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
- রিয়া গোপ (৬) — বাসার ছাদে খেলতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
- সাফকাত সামির (১১) — একটি মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
- তাহমিদ তামিম (১৫) — নরসিংদী শহরের নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
- মো. ইমন মিয়া (২২) — শিবপুরের সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের শিক্ষার্থী।
বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে বাহিরের দেশে অবস্থান রত অনেক শিক্ষার্থি সেইদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করছে।
Follow topics bangla facebook page
আরো পড়ুনঃ
ডিলিট করা ফেসবুক পোস্ট কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় আসুন জেনে নেই