Tech Tips

এখনি সাবধান হোন। হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায়

আজকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ টপিক হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব।

বর্তমানে দিনদিন অনলাইন ব্যবহারকারী সংখ্যা বেড়েই চলছে। তার মধ্যে ব্যবহারকারীদের নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অনলাইনে সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে হ্যাকারের দ্বারা তথ্য ও ডিভাইস হ্যাকিং হওয়া।

মানুষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যখন হ্যাক  হয়ে যায় তখন তাকে অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। দিন দিন হ্যাকারদের সংখ্যা বেড়েই চলছে তার সাথে তারা মানুষের তথ্য চুরি করার পর বিভিন্ন ভাবে ক্ষতি বা ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করে যা একটা মানুষের জীবনযাত্রা উলট-পালট করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এরকম বিপদে পড়ার আগেই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

তাই যারা অনলাইনের সাথে জড়িত রয়েছেন সবারই হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানা অতি জরুরী।

হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায়

একজন হ্যাকার তখনই আপনার তথ্য বা ডিভাইস হ্যাক করতে পারবে যখন তার ফাঁদে পা দিবেন। কি বুঝতে পারছেন না? আসুন বিষয়টা খুলে বলি, আমাদের অসতর্কতা বা গাফিলতির কারণেই হ্যাকাররা আমাদের ডিভাইস বা তথ্য হ্যাক করতে পারে।

তাই ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় কিছুদিক খেয়াল রাখতে হবে এবং সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে তাহলেই হ্যাকার এর দ্বারা আপনার কোন তথ্য হ্যাক করা সম্ভব হবে না। তাই আমি কিছু টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করব যে গুলো অনুসরণ করলে আশা করি অনলাইনে নিরাপদ থাকতে পারবেন

১। ব্রাউজার

ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য যে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা হয় তাকে ব্রাউজার বলা হয়। আমার মতে সবথেকে সেরা ব্রাউজার হচ্ছে গুগল ক্রোম, এর কারণ হচ্ছে যে সাইট গুলোতে ক্ষতিকর ফাইল বা ব্যবহারকারীদের জন্য যে সাইট ক্ষতিকর হতে পারে সেই সাইটগুলো গুগল থেকে ব্যান করে দেওয়া হয়। আর গুগল ক্রোম ব্রাউজার দিয়ে সেই সাইটে ভিজিট করা যায় না, ভিজিট করার সময় warring দেয়, তাই আমার পরামর্শ থাকবে ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য ক্রোম বাউজার ব্যবহার করবেন।

২। ডাউনলোড

কোন সাইট থেকে ডাউনলোড করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় আমরা অরজিনাল ফাইল ডাউনলোড করতে গিয়ে ভাইরাস জনিত ফাইল ডাউনলোড করে ফেলি। আর সেই ফাইল যদি আপনার ডিভাইসে একবার ওপেন করা হয়। তাহলে আপনার পুরো ডিভাইস হ্যাকারদের কন্ট্রোলে চলে যেতে পারে। তাই বিশ্বস্ত সাইট থেকে ডাউনলোড করার চেষ্টা করবেন এবং ডাউনলোড করার সময় খেয়াল রাখবেন অরিজিনাল ফাইল ডাউনলোড হচ্ছে কিনা।

৩। লিংক

অন্যের দেওয়া কোন লিংকে প্রবেশ করার আগে অবশ্যই ভেবেচিন্তে প্রবেশ করবেন। কোন অপরিচিত লোক যদি হঠাৎ লিংক পাঠিয়ে আপনাকে বলে প্রবেশ করার জন্য সাথে সাথে লিংকে প্রবেশ করবেন না। এই সমস্যার সম্মুখীন হয় বেশিরভাগ মেয়েরা। ফেসবুকে মেয়েদেরকে লিংক পাঠিয়ে বলা হয় সেখানে ওই মেয়েটার অনেক খারাপ ধরনের ছবি রয়েছে। তাই মেয়েটা ভয় পেয়ে সাথে সাথে লিংকে প্রবেশ করে দেখতে চাই আর তখনই হ্যাকারদের কাছে মেয়ের আইডির পুরো এক্সেস চলে যায় এবং কোন লিংকে ঢোকার পর যদি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চাই ভুলেতেও কোন তথ্য দিবেন না। তাই সন্দেহজনক লিংকগুলোতে প্রবেশ করার থেকে বিরত থাকুন।

৪। ক্র্যাক ফাইল

যে সফটওয়্যার বা গেম গুলো প্রো বা  প্রিমিয়াম সেগুলো  ডলার বা টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করতে হয়। সে প্রিমিয়াম সফটওয়্যার বা গেম গুলোর ক্র্যাক ভার্সন বিভিন্ন ডেভলপার বের করে থাকে যা ফ্রিতে ব্যবহার করা যায়। এই ধরনের ক্র্যাক ফাইল গুলোতে ভাইরাস থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এই ফাইলগুলো ব্যবহার করার সময় অবশ্যই ভেবে চিন্তে ব্যবহার করতে হবে। হুটহাট কোন ওয়েবসাইট থেকে এই ধরনের ফাইল ডাউনলোড করে ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় গুলোর মধ্যে ক্র্যাক ফাইল ব্যবহার  না করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ টিপস।

৫। পপ আপ এড

আপনি খেয়াল করে দেখবেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ভিজিট করার পর নানা ধরনের অশ্লীল টাইপের পপ আপ এড দেখায় এবং নোটিফিকেশন Allow করার পারমিশন চাই, ভুলেতে ও এসব অ্যাডগুলোতে ক্লিক করবেন না। এই এড গুলোতে ক্লিক করার পর ভাইরাসজনিত সফটওয়্যার ডাউনলোড হওয়ার পারমিশন চাইবে, আপনি যদি ভুল করে একবার সফটওয়্যার ডাউনলোড করে ফেলেন তাহলে আপনার ডিভাইসটি হ্যাকিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বেশিরভাগ সময় এডাল্ট টাইপের সাইটগুলোতে এই ধরনের অ্যাড দেখায় তাই এই সাইটগুলো ব্যবহার করার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

৬। কঠিন পাসওয়ার্ড

হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় গুলোর মধ্যে কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপায়। আমরা সহজে পাসওয়ার্ড মনে রাখার জন্য সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে থাকি। যার কারনে আপনার একাউন্ট হ্যাকারদের কাছে হ্যাক করা সহজ হয়ে যায়। হ্যাকাররা  যখন হ্যাক করার জন্য বিভিন্ন ধরনের টুলস তৈরি করে এবং সেটি ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড বের করার চেষ্টা করে তখন সে টুলস গুলো সহজ টাইপের পাসওয়ার্ড গুলো সহজেই জেনারেট করতে পারে। । তাই চেষ্টা করবেন সব সময় একটু কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার জন্য। যেমনঃ AmR44%#@yT এভাবে যদি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন তাহলে আপনার একাউন্টের সিকিউরিটি বৃদ্ধি পাবে।

৭। পাসওয়ার্ড শেয়ারিং

হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় এর মধ্যে পাসওয়ার্ড শেয়ারিং এর বিষয়গুলো খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অনেক ক্ষেত্রে আমাদের কাছের মানুষ বা বিশ্বস্ত লোকদের কাছে পাসওয়ার্ড শেয়ার করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। আপনি যদি কোন যোগাযোগ মাধ্যম যেমনঃ facebook, instagram আরো অন্যান্য মাধ্যমে পাসওয়ার্ড শেয়ার করে থাকেন এবং সেই মেসেজটি পরবর্তীতে যদি থেকে যায়। তাহলে কিন্তু হ্যাকাররা আপনার বা আপনার সেই মানুষটির অ্যাকাউন্ট যদি হ্যাক করে ফেলে তাহলে আপনার একাউন্টের ইনফরমেশন গুলো পেয়ে যাবে। তাই পরামর্শ থাকবে কারো সাথে যদি পাসওয়ার্ড শেয়ার করার প্রয়োজন হয়। তাহলে পাসওয়ার্ড শেয়ার করার পরে সে মেসেজগুলো ডিলিট করে দেওয়ার।

আরো পড়ুনঃ হ্যাকার থেকে বাঁচুন! ফেসবুকে নিরাপদ থাকার উপায়

৮। টু স্টেপ ভেরিফিকেশন

বর্তমানে ব্যবহারকারীদের সিকিউরিটির কথা মাথায় রেখে বেশিরভাগ যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্যান্য সাইট গুলোতে টু স্টেপ ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা রেখেছে। আপনারা যারা টু স্টেপ ভেরিফিকেশন সম্পর্কে জানেন না, তাদেরকে বলতে চাই টু স্টেপ ভেরিফিকেশন হচ্ছে আপনার একাউন্টে লগইন করার জন্য লগিন ডিটেলস দেওয়ার পরও মোবাইল নাম্বার বা জিমেইলে একটা কোড প্রেরণ করা হয় সেই কোড ছাড়া  আপনার একাউন্টে প্রবেশ করতে পারবেন না। তাই চেষ্টা করবেন একাউন্টে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন অন রাখার এর ফলে হ্যাকাররা আপনার একাউন্টের লগইন ডিটেলস পাওয়ার পরও একাউন্টে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় গুলোর মধ্যে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন অন রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

৯। বিশ্বস্ত সাইট থেকে শপিং করুন

অনলাইনে শপিং করার সময় সাইটগুলোতে আমাদের কার্ডের ডিটেলস দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই আজেবাজে কোন সাইট থেকে শপিং করা যাবে না বিশ্বস্ত এবং বড় যে সাইটগুলো রয়েছে সেই সাইট থেকে শপিং করার চেষ্টা করবেন। এর কারণ হচ্ছে অবিশ্বাস্ত সাইটে আপনার কার্ডের ডিটেলস দিলে সেটার তথ্য চুরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বা আপনার ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক হয়ে যেতে পারে।

১০। পাবলিক ওয়াই ফাই

বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা কোন রেস্টুরেন্ট বা শপিংমলে গেলে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আপনি কি জানেন এই পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার মোবাইলের তথ্য চুরি  হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার ফলে হ্যাকারে খুব সহজে আপনার মোবাইলের তথ্য গুলো একসেস করে নিতে পারে। তাই কখনোই পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করবেন না।

১১। সফটওয়্যার আপডেট রাখুন

আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য যে সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করি সে সফটওয়্যার গুলো সব সময় আপডেট রাখার চেষ্টা করবেন। প্রতিটা যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য আলাদা সফটওয়্যার রয়েছে। যেমনঃ ফেসবুক ব্যবহার করার জন্য ফেসবুক ব্রাউজার রয়েছে এবং ম্যাসেঞ্জার রয়েছে, আরো অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য আলাদা আলাদা সফটওয়্যার রয়েছে। আপনি যে যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন না কেন বা যে কোন কাজের জন্য যে  সফটওয়্যার ব্যবহার করেন না কেন! সব সময় সেই সফটওয়্যারের লেটেস্ট ভার্সন ব্যবহার করবেন। এর কারণ হচ্ছে আগের ভার্সনের সফটওয়্যার গুলোতে ত্রুটি বা দুর্বলতা থাকতে পারে যার ফলে হ্যাকাররা আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারে।

১২। শেষ কথা

আশা করি আজকে হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আর্টিকেলটি সবাই মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আমি যে হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে টিপস গুলো আলোচনা করেছি সেগুলো যদি অনুসরণ করেন তাহলে আশা করা যায় আপনার কোন একাউন্ট বা ডিভাইস হ্যাকার দ্বারা হ্যাক হবে না। আশা করি আপনাদের কাছে হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এই  হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় আর্টিকেলটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিন।

Follow topics bangla facebook page

আরো পড়ুনঃ

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪

বিকাশে স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম

Topicsbangla

জানা ও অজানা বিষয় গুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরা আমাদের মূল লক্ষ।আমাদের সাথেই থাকুন আশা করি উপকৃত হবেন।☺☺

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button