Information

হুন্ডি কি এবং কিভাবে কাজ করে আসুন জেনে নেই

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে অর্থ লেনদেন করার প্রক্রিয়াকেই হুন্ডি বলা হয়।বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করার জন্য বাহিরের দেশে থাকেন।যারা বাহিরের দেশে থাকেন তারা তাদের পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান টাকা পাঠিয়ে থাকেন।বৈদেশিক এই টাকা যদি আনুষ্ঠানিক ভাবে সকল সরকারি নিয়ম মেনে দেশে পাঠানো হয় তখন সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় রেমিট্যান্স।

আর যদি এই টাকা অনানুষ্ঠানিকভাবে অবৈধ উপায়ে দেশে পাঠানো হয় তখনি তা হয়ে যায় হুন্ডি।আজকের ব্লগে আমরা হুন্ডি কি ও এটি কিভাবে কাজ করে তার যাবতীয় বিষয় জানতে পারবো।

হুন্ডি কি

হুন্ডি একটি নীতি বহির্ভূত কাজ।সরকারি আইন না মেনে অনানুষ্ঠানিক উপায়ে টাকা পাঠানোকেই সাধারনত হুন্ডি বলা হয়।এটি সাধারনত তো বিনিময় বিল নামেও পরিচিত।হুন্ডি শব্দটি সংস্কৃ্ত শব্দ ” হুন্ড” থেকে এসেছে যার অর্থ হলো সংগ্রহ করা।এর আরেকটি প্রচলিত নাম হচ্ছে” হাওয়ালা ” যা আরবি শব্দ থেকে এসেছে।এই পদ্ধতিটি জনপ্রিয়তা লাভের সবচেয়ে বড় কারন হলো এ পদ্ধতিতে অর্থ লেনদেন করার ক্ষেত্রে খরচ অনেক কম হয়।

এ ব্যবসায় মূলত দালাল বা হাওয়ালাদারেরা পরিচালনা করেন।এরা প্রবাসীদের টাকা দেশে থাকা আত্মীয়দের কাছে হাতে হাতে পৌছে দেন।

হুন্ডি ও হাওয়ালার মধ্যে পার্থক্য

এই দুটি শব্দ মূলত একই জিনিস তবুও এর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে।হুন্ডি এবং হাওয়ালার প্রধান পার্থক্য হলো এদের লেনদেন করার ধরন অনেকটা আলাদা।হুন্ডির ক্ষেত্রে সরাসরি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় টাকা আদান প্রদান করা হয় ও এটি ভারত পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে বেশি ব্যবহার করা হয় আর হাওয়ালাএর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মাধ্যম বা দালালের মাধ্যমে পুজি ও ঋনের মিশ্রনে টাকা লেনদেন করা হয় ও এটি মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রচলিত।

হুন্ডির ইতিহাস

অতীতে হুন্ডি ছিলো বৈধ ও নিরাপদ কিন্তু বর্তমানে এটি নিরাপদ হলেও বৈধ নয়।অষ্টম শতাব্দিতে চীন থেকে ভূমধ্যাসাগরীয় অঞ্চল গুলোতে নানা ধরনের ব্যবসায় পরিচালিত হতো।সাধারনত একটি নির্দিষ্ট এলাকাতে নানা ধরনের ব্যবসায়ীদের আসা যাওয়ায় কারনে এখানের ডাকাতের প্রকপ অনেকটা বেড়ে যায় যার ফলে এখানকার ব্যবসায়ীগন সমস্যার সম্মুখিন হয়।

নগদ অর্থ বা মূল্যবান সম্পদ পরিবহন করা ওই সময়ে নিরাপর ছিলো না।এসব কারনে তখন প্রথম হুন্ডির প্রসার ঘটে।প্রাচীন ভারতেও এ পদ্ধতির একটি ইতিহাস রয়েছে।

ভারতীয় রাও ব্যবসা বানিজ্য করার জন্য এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করতো।মুঘল সম্রাটদের আমলে এটি বিকশিত হয়।সতেরো শতাব্দিতে বাংলা থেকে দিল্লিতে ভূমি রাজস্ব পাঠানো হতো গরুর গাড়ি করে যা মোটেও নিরাপদ ছিলো না।এসময়ে ভারতে এই ব্যবস্থা বিকশিত লাভ করে।শুধু সরকারি কাজে নয় বেসরকারি কাজ ও ব্যবসার ক্ষেত্রেও তখন থেকে এ পদ্ধতিতে অর্থ লেনদেন করা হতো।

এ সময়ের এই ধরনের ব্যবসায়ীদের বলা হতো সররাফ।উপমহাদেশ জুড়ে সররাফ রা ছিলেন খুবি বিশ্বস্ত।ভারতীয় উপমহাদেশে সররাফ দের সাহায্য নিয়েই দূর দূরান্তের সকল ধরনের লেনদেন করা হতো।পরবর্তী সময়ে যখন ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে তখন এ ব্যবসায় ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হতে শুরু করে।

বাংলাদেশে হুন্ডির পরিমান

বর্তমানে কি পরিমান টাকা এ পদ্ধতিতে দেশে আসে তা জানা খুবই মুশকিল।তবে কিছু বছর আগে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রনালয় জানিয়েছে বাংলাদেশে বাহিরের দেশ থেকে সরকারি আইনি উপায়ে বা আনুষ্ঠানিক ভাবে টাকা এসেছে মাত্র ৪৯% আর অনানুষ্ঠানিকভাবে টাকা এসেছে ৫১% যা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।

এ থেকে বোঝা যাচ্ছে প্রবাসীরা বাংলাদেশে যে পরিমান টাকা পাঠায় তার অর্ধেক আসে রেমিট্যান্স হিসেবে বাকি অর্ধেক আসে অনানুষ্ঠানিক ভাবে ও সরকারি আইন না মেনে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ছাত্রছাত্রীদের সরকারি চাকুরি কোটা আন্দলোন নিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিলো সে সময়ে প্রবাসী রা দেশে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স পাঠানো পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দিয়েছিলো যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায় চলতি বছরে জুন মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিলো ২.৫৪ বিলিয়ন ডলার যা জুলাই মাসে কমে গিয়ে দাড়িয়েছিলো ১.৫৭ ডলার।

অপকারিতা

এ ব্যবসায় ব্যাংকিং আইন মেনে চলে না যার ফলে এটিতে রাজস্ব সুবিধা পাওয়া যাবে না।অনানুষ্ঠানিকভাবে এবং দেশের সরকারি ভাবে ব্যাংকিং নিয়ম না মেনে অর্থ লেনদেন করা হয় যার ফলে এটি বৈধ নয়।যার ফলে বৈধ ভাবে উপার্জিত অর্থ ও অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়।প্রবাসীরা রাষ্টীয় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধ থেক বঞ্চিত হয়।দেশের ব্যাংকে বিনিয়োগ সুবিধা পাওয়া যায়না।

এ পদ্ধতিতে টাকা পাঠানোও অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ।সম্পদ পাচারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায় ফলে দেশ অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।এ পদ্ধতিতে টাকা অন্যদেশে পাঠানোর মাধ্যমে দেশের দূর্নীতিবাজ লোকের দেশীয় সম্পদ নষ্ট করছে।

হুন্ডি ব্যবসায় সকল দেশেই অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়।এ ব্যবসায় করার ফলে দেশীয় অর্থনীতির অনেক ক্ষতি হয়।এ জন্য আমাদের সকলের উচিত এ ধরনের ব্যবসায় থেকে নিজেকে দূরে রাখা।

আরো পড়ুনঃ

বিদেশ থেকে কিভাবে টাকা পাঠানো যায়? আসুন জেনে নেই

প্রবাসী কল্যান ব্যাংক লোনের নিয়ম জেনে নিন

Follow topics bangla facebook page

 

Shakiul Hasan

Hey everybody! I blog on everything and anything that spikes any hint of interest in me! Do check my blogs out

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button