বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক মানুষ জীবিকার তাগিদে বিদেশে চলে যায় এবং সেইখানে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে নিজের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। সেইখানে কাজ করার পর যখন তারা দেশে নিজের স্বজনদের কাছে বিদেশ থেকে টাকা পাঠাবে তখন তাদের অবশ্যই বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে।কেননা তারা যদি এই নিয়ম না জানে তাহলে তারা তাদের স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাতে পারবেনা। আর তার স্বজনরা তাদের ওপর নির্ভর করে থাকে। যারা বিদেশে থাকেন তারা খুব কষ্ট করে কাজ করে দেশে তাদের স্বজনদের জন্য টাকা পাঠিয়ে থাকেন। আর এটিকে মূলত রেমিট্যান্স বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে তারা দেশে স্বজনদের কাছে টাকা পাঠায়। আজকের ব্লগে আমরা বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবো
বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশ থেকে বৈধ উপায়ে টাকা পাঠানো যায়। এসব মাধ্যম গুলোর মধ্যে রয়েছে বিকাশ,ট্যাপট্যাপ সেন্ড, স্ক্রিল, মানিগ্রাম,রেমিটলি, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, জুম ইত্যাদি।
বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানো
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় টাকা পাঠানোর মাধ্যম হলো বিকাশ। বিকাশের সাহায্যে খুব সহজেই টাকা পাঠানো যায়। ব্র্যাক ব্যাংকের সাথে সংযুক্ত এই প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স গুলো খুব সহজেই তাদের পরিবারের লোকজনের কাছে পৌছিয়ে দিতে পারে। বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর জন্য সবার আগে সেই দেশের অনুমোদিত ব্যাংকের শাখায় গিয়ে রেজিস্ট্রার করতে হয়। বিকাশের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০ টাকা শুরু করে সর্বোচ্চ ১২৫০০০ টাকা পর্যন্ত পাঠাতে পারে। প্রতিমাসে ৪৫০০০০ টাকা সর্বোচ্চ পাঠাতে পারে। বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য এক্সট্রা কোনো চার্জ দিতে হয়।
ট্যাপট্যাপ সেন্ড এর মাধ্যমে টাকা পাঠানো
ট্যাপট্যাপ সেন্ড সাধারণত ২০১৯ বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। ট্যাপট্যাপ সেন্ড এর মাধ্যমে টাকা পাঠানো হলে অতিরিক্ত কোনো ফি প্রদান করতে হয়না। এই মাধ্যম টি সাধারণত মোবাইল আ্যপ এর সাহায্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি আমেরিকার ফিন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটি কর্তৃক অনুমোদিত। বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে ২.৫% রেমিট্যান্স প্রদানের পাশাপাশি ট্যাপট্যাপ সেন্ড থেকে টাকা পাঠানো হলে এর থেকে বিশেষ ধরনের বোনাস ও পাওয়া যায়। কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি এছাড়াও অন্যান্য দেশ থেকে খুব সহজেই এর মাধ্যমে টাকা দেশে পাঠানো যায়।সেরা মুদ্রা বিনিময় হারের কারনে এবং অধিক নিরাপত্তার কারনে এটি খুব সহজেই সকলের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
মানিগ্রাম এর মাধ্যমে টাকা পাঠানো
বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর সবচেয়ে পুরাতুন মাধ্যম হলো মানিগ্রাম। মানিগ্রামের প্রায় ৩ লক্ষাধিক এজেন্ট রয়েছে। অনেক পুরাতুন মাধ্যম হওয়ার কারনে এটি সকলের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করতে পেরেছে। এ পদ্ধতিতে টাকা পাঠানোর জন্য প্রদানকারীর পরিচয়পত্র সহ কিছু কাগজপত্র ও সেই দেশের মুদ্রার নির্দিষ্ট পরিমান টাকা নিয়ে মানিগ্রাম এজেন্ট এর কাছে যেতে হবে। এর জন্য গ্রহনকারীর এ্যাকাউন্ট ও মোবাইল ওয়ালেট নাম্বার প্রয়োজন হয়ে থাকে। মানিগ্রামের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড হলে প্রতি ১০০০ আমেরিকান ডলারে ব্যাংক চার্জ ৩২.৯৯ আমেরিকান ডলার ও ডেবিট কার্ড হলে ১.৯৯ আমেরিকান ডলার।
রেমিটলি এর মাধ্যমে টাকা পাঠানো
রেমিটলি এর মাধ্যমে খুব কম চার্জ এ বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠানো যায়। বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক যেমন ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইসলামি ব্যাংক রেমিটলির মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করছে। এতে মাত্র ২.৯৯ চার্জ গ্রহন করে থাকে। রেমিটলি ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর মাধ্যমে দেশের মুদ্রার খুব ভালো এক্সচেঞ্জ রেট পাওয়া যায়। এর ফান্ড ট্রান্সফারের দুটি মুডি রয়েছে যেগুলো হলো এক্সপ্রেস ও ইকোনোমি। এক্সপ্রেসের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হলে খুব দ্রুত টাকা পৌছে যায়। রেমিটলি এ্যাকাউন্ট ফ্রিতে খুব সহজেই তৈরী করা যায়। একাউন্ট তৈরী করে গ্রহনকারীর নাম ঠিকানা এবং পেমেন্টের তথ্য প্রদান করলেই মানি ট্রান্সফার করা যায়।
জুম ও স্ক্রিল এর মাধ্যমে টাকা পাঠানো
জুম ও স্ক্রিল এই দুটি মাধ্যম সাধারণত পেপালের বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।ফ্রিলান্সার দের উপার্জিত টাকা হাতে পাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত পেমেন্ট সিস্টেম হলো স্ক্রিল।আর জুম এর ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে টাকা প্রদানের ক্ষেত্রে ৯৯৯ ডলারের জন্য ৫.৯ ডলার ফি দিতে হয়। এরপর থেকে ৯৯৯ ডলারের বেশি মানি ট্রান্সফার করলে ফি ধার্য হবে ৯.৯৯ ডলার। একটি স্ক্রিল একাউন্ট থেকে নানান ধরনের মাধ্যমে বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠানো যায়। বাংলাদেশের এ্যাকাউন্ট গুলোতে টাকা পাঠানোর জন্য একাউন্টটি ব্যবসায়িক হতে হবে। এখানে কোনো ফি প্রদান করতে হয় না। তবে গ্লোবাল পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করলে টাকা প্রদানপূর্বক ১.২৫ পর্যন্ত ফি কাটতে পারে।
আরো পড়ুনঃ বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম জেনে নিন
এখন বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর নিয়ম গুলো আরো সহজ তর করা হয়েছে। বাংলাদেশের সরকার অনুমোদিত এসব মাধ্যম ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে দেশে স্বজনদের কাছে খুব সহজেই টাকা পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। এতে করে গ্রামের মানুষেরাও বিশ্বমানের কাজগুলোতে অংশগ্রহন করতে পারছে।