বিটকয়েন কি? বিটকয়েন কি বাংলাদেশে বৈধ?
বিটকয়েন কি? বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে? বিটকয়েন কি বাংলাদেশে বৈধ? বিটকয়েনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। বর্তমান সময়ে যারা অনলাইনে সাথে জড়িত রয়েছে তাদের মধ্যে কম বেশি সবাই বিটকয়েনের নাম শুনে থাকবেন। এই বিটকয়েনের সম্পর্কে অনেকের জানার খুব আগ্রহ। বর্তমান সময়ে বিটকয়েনের জনপ্রিয়তা আকাশ চুম্বুক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার কারনে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এ বিটকয়েন সম্পর্কে আপনাদেরকে নানা অজানা তথ্য জানানোর চেষ্টা করবো।
এক পলকে সম্পুর্ন পোস্ট
১।বিটকয়েন কি
বিটকয়েন সম্পর্কে সবার আগে মনে যে প্রশ্নটি জাগে তা হচ্ছে বিটকয়েন আসলে কি? একদম সোজা কথায় বলতে গেলে বিটকয়েন হচ্ছে একটি অনলাইন ভার্চুয়াল ডিজিটাল মুদ্রা। বিটকয়েন লেনদেন করার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন পড়ে না। এবং এটি কোন দেশের সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত মুদ্রা নয়। ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্ম নামের এক ব্যক্তি এই এই মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলন ঘটায় যা পিয়ার টু পিয়ার মুদ্রা বলে অভিহিত হয়।
বিটকয়েন যে কেউ ব্যবহার করতে পারে এর জন্য কোন নিবন্ধনের প্রয়োজন হয় না।
২। বিটকয়েনের ইতিহাস
বিটকয়েনের ইতিহাস সম্পর্কে যদি বলতে হয়।১৮ আগষ্ট ২০১৮ সালে bitcoi.org নামকরণ দিয়ে একটি ডোমেইন নিবন্ধিত করা হয় । সেই একই বছরের নভেম্বরে সাতোশি নাকামোতো রচনাকারের বিটকয়েন কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে তা সর্বপ্রথম প্রকাশ করা হয় metzdowd.com ওয়েব সাইটের মেইলিং লিস্টে। এর পরে তার পরের বছরে মানে ২০০৯ সালে সাতোশি বিটকয়েনের সোর্স কোড উন্মুক্ত করে সোর্সফর্য নামে একটি প্লাটফর্মে। তারপর বিটকয়েনের নেটওয়ার্ক সম্প্রচার করা হয় এবং সাতোশি ব্লক চেইনে সর্বপ্রথম ব্লাকমাইলিং করে যা জেনেসিস ব্লক স্বীকৃতি পায়। এবং সর্বপ্রথম বিটকয়েন আদান-প্রদান ঘটেছিল সাতোশি নাকামতো এবং হাল ফিনি নামক এক ব্যাক্তির সাথে। এভাবে বিটকয়েন এর উৎপত্তি ঘটেছিল।
৩। বিটকয়েন এর দাম
এবার চলুন বিটকয়েন এর দাম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। বিটকয়েন দিনদিন যেরকম জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তার সাথে সাথে কিন্তু এর দাম ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতীতে বিটকয়েনের দাম এবং বর্তমানে বিটকয়েনের দামের পার্থক্য দেখে আপনি অবাক হয়ে যাবেন।
সর্বপ্রথম বিটকয়েন কেনা বেচা শুরু হয় ২০০৯ সালের মে মাসে এবং ২০১০ সালের জুলাই মাসে প্রতিটি বিট কয়েনের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল মাএ ০.০৯ ডলার। আর বর্তমান ২০২২ সাল চলছে এবং প্রতিটি বিটকয়েনের মূল্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭,০০৬.৩০ ডলার( সময়ের সাথে সাথে এটি বাড়তে ও কমতে পারে)। বর্তমান ২০২২ সালে ১৩ বছরে বিটকয়েন পা দিল। মাত্র ১৩ বছরের ব্যবধানে বিটকয়েনের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গিয়েছে। তাহলে চিন্তা করে দেখুন ২০০৯ সালে যদি আপনি একটি বিটকয়েন কিনে রাখতেন তাহলে আজকে ধনী হয়ে যেতেন।
৪। বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে
এতক্ষণে বিটকয়েন সম্পর্কে জানতে জানতে আপনাদের মনে অবশ্যই প্রশ্ন জেগেছে বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে। একদম সহজ ভাবে যদি বলতে হয় বিটকয়েন হচ্ছে একটি অনলাইন ডিজিটাল মুদ্রা। তাই এটি আদান-প্রদান করার জন্য অবশ্য অনলাইনের মাধ্যমে করতে হবে। আমরা যেরকম একস্থান থেকে অন্যস্থানে টাকা আদান প্রদান করার জন্য ব্যাংক ব্যবহার করে থাকি। তেমনি বিটকয়েন আদান-প্রদান করার জন্য ওয়ালেট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনি এই ওয়ালেট এর মাধ্যমে বিটকয়েন ডিপোজিট এবং উইথড্র করতে পারবেন। এবং তার সাথে অন্যের ওয়ালেটে আপনার বিটকয়েন প্রেরন করতে পারবেন। এখন ওয়ালেট সর্ম্পকে যদি একটু ধারনা দেই তাহলে coinbase, binance এই সাইটগুলো অনলাইনের ওয়ালেট হিসেবে কাজ করে। এই সাইটগুলোর মতন আরও অসংখ্য সাইট রয়েছে।
৫। বিটকয়েন কেন ব্যবহার করবেন?
আসলেই তো বিটকয়েন কেন ব্যবহার করবেন। আরো অনেক মাধ্যম রয়েছে অর্থ লেনদেন করার জন্য তাহলে লেনদেন করার জন্য বিটকয়েনকে কেন বেছে নিবেন? বর্তমানে অনলাইনে টাকা লেনদেন করার জন্য আরো অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। সেগুলো বাদ দিয়ে কেন বিটকয়েন ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
এর কারণ হচ্ছে অন্যান্য মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে যদি আপনি টাকা লেনদেন করতে চান তাহলে আপনার পরিচয় পত্র লাগবে এবং আপনার ব্যক্তিগত ডকুমেন্টের প্রয়োজন পড়বে যা অনেকের কাছে ঝামেলা যুক্ত মনে হতে পারে কিন্তু বিটকয়েন ব্যবহার করা খুব সহজ এবং এটি ব্যবহার করতে আপনার নিবন্ধিত করার কোন প্রয়োজন নেই। যেকোন ব্যক্তি তার পরিচয় গোপন রেখে এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্বল্প পরিমাণ চার্জের বিনিময়ে বিটকয়েন লেনদেন করতে পারেন। এর কারণে সাইবারক্রাইম বা অন্যান্য অপরাধমূলক কাজ গুলোর জন্য বিটকয়েন বেশি ব্যবহৃত হয়।
৬।শুধুমাত্র বিটকয়েনে ডিজিটাল ক্রিপ্টোকারেন্সি?
এখন মনে হতেই পারে শুধুমাত্র বিটকয়েন ডিজিটাল ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনা। প্রথমে ডিজিটাল ক্রিপ্টোকারেন্সি কি সেটা সম্পর্কে বলা যাক। ডিজিটাল ক্রিপ্টোকারেন্সি হচ্ছে অনলাইন মুদ্রা বিটকয়েন একটি ডিজিটাল ক্রিপ্টোকারেন্সি। এখন কথা হচ্ছে অনলাইনে শুধু বিটকয়েনই ডিজিটাল ক্রিপ্টোকারেন্সি নাকি আরো অন্যান্য ডিজিটাল ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে।
অবশ্যই বিটকয়েন ছাড়াও আরো অসংখ্য ক্রিপ্টোকারেন্সি অনলাইন এর সাথে যুক্ত রয়েছে। বিটকয়েনের প্রচলনের পরে আস্তে আস্তে মার্কেটে আরো অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি এর আগমন ঘটেছে। এবং সেই ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলোর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সি নাম যদি বলি সেগুলো হচ্ছে। litecoin, Ethereum,Theter,Solana সহ আরো অসংখ্য ক্রিপ্টোকারেন্সি অনলাইনে রয়েছে। এমনকি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কয়েন অনলাইনে যুক্ত হচ্ছে। তাহলে বলা যেতে পারে শুধুমাত্র বিটকয়েন ডিজিটাল ক্রিপ্টোকারেন্সি নয় এর সাথে আরও অসংখ্য ক্রিপ্টোকারেন্সি অনলাইন এর সাথে যুক্ত রয়েছে।
৮। বিটকয়েন এর সুবিধা
বিটকয়েন ব্যবহারের ফলে বিটকয়েন এর সুবিধা রয়েছে। প্রথমেই যদি বলতে হয় তা হচ্ছে বিটকয়েন এমন একটি অর্থ আদান-প্রদানের মাধ্যম পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে লেনদেন করা সম্ভব। এর জন্য বাড়তি কোনো ফী দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এবং বিটকয়েন ব্যবহার যে কেউ করতে পারে এর জন্য কোন সীমাবদ্ধতা নেই। বিটকয়েন ডিসেন্ট্রালাইজড হওয়ার ফলে খুব দ্রুত অর্থ লেনদেন করা যায়। বিটকয়েন অনেক নিরাপদ একটি অর্থ বিনিময়ের মাধ্যম যা হ্যাক করা প্রায় অসম্ভব তাই যে কেউ নিশ্চিন্তে বিটকয়েন ব্যবহার করতে পারে।
৯। বিটকয়েন এর অসুবিধা
বিটকয়েন এর সুবিধা যেরকম রয়েছে তার সাথে বিটকয়েন এর অসুবিধা রয়েছে। বিটকয়েন যেহেতু ছদ্মনামে প্রচলিত এবং এর কোন কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান নেই। যার কারণে যে কেউ নিজের পরিচয় গোপন রেখে অর্থ লেনদেন করতে পারেন।এই প্রক্রিয়ায় কোন বেআইনি লেনদেন হয় সেটি অনেক ক্ষেত্রে নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। কিন্তু ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করলে তা সনাক্ত করা সম্ভব। যেহেতু বিটকয়েন এর দাম প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে সেহেতু বিটকয়েনের মাধ্যমে লেনদেন করার পরে সেটি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এখন পর্যন্ত অনেক দেশ গুলোতে বিটকয়েন এর বৈধতা দেওয়া হয়নি। তাই যে দেশগুলোতে বিটকয়েন এর বৈধতা দেওয়া হয়নি সেই দেশগুলো থেকে যদি বিটকয়েন ব্যবহার করা হয় বা বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদান করা হয় তাহলে আইনি জটিলতায় পড়তে হতে পারে। অনেকেই আছেন বিটকয়েন ক্রয় করে সংরক্ষন করে রাখছেন এই ভেবে যে ভবিষ্যতে এর দাম বাড়লে লাভবান হতে পারবেন। কিন্তু বিটকয়েন যেকোনো সময় দাম কমে যেতে পারে এবং আপনার দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।
১০। বিটকয়েন কোন কোন দেশে বৈধ? বিটকয়েন কি বাংলাদেশে বৈধ?
এতক্ষণ ধরে আর্টিকেল পড়ার পর আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি বিটকয়েন সব দেশে বৈধ নয়। আবার কিছু কিছু দেশগুলোতে বিটকয়েন সরকারিভাবে বৈধ। সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে বিটকয়েন কোন কোন দেশে বৈধ? বা বিটকয়েন কি বাংলাদেশে বৈধ? তাহলে প্রথমে জানা যাক বিটকয়েন কোন কোন দেশে বৈধ। যে দেশগুলোতে বিটকয়েন বৈধ সে দেশগুলোর নাম হল। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এই দেশগুলোতে সরকারিভাবে বিটকয়েন কে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এখন কথা হচ্ছে বিটকয়েন কি বাংলাদেশে বৈধ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকার বিটকয়েন কে বৈধতা দেওয়া হয়নি। তাই বাংলাদেশ বিটকয়েন ব্যবহার করা বা বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করা পুরোপুরি অপরাধ যোগ্য। বাংলাদেশ থেকে যদি বিটকয়েন ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে আইনি জটিলতার মত সমস্যা পড়তে হতে পারে।
১২। বিভিন্ন দেশে এখনো বিটকয়েনকে বৈধতা না দেওয়ার কারণ কি
বিটকয়েন এত সহজে ব্যবহার করা যায় এবং এর এতো সুযোগ সুবিধা থাকার পর। বিভিন্ন দেশ বিটকয়েনকে বৈধতা না দেওয়ার কারণ কি?
অবশ্যই কিছু কারণ রয়েছে এই কারণগুলোর জন্য এখন পর্যন্ত বিটকয়েন কে অনেকগুলো দেশ বৈধতা স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। যেহেতু বিটকয়েনের কোন নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের দ্বারা পরিচালিত হয় না। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে বিটকয়েন অন্তত ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যান্য দেশের সরকার মনে করেন এই মুদ্রা ব্যবহার করার ফলে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসি মত কর্মকাণ্ডের জন্য এই মুদ্রা বেশি ব্যবহার করতে পারে। বাংলাদেশে মুদ্রাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবৈধ ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশের ব্যাংক দেশের জনগণকে সতর্ক করার জন্য বিটকয়েনের সম্পর্কে যে বিজ্ঞপ্তি ও প্রকাশ করে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মাসে। সেখানে বলা হয়েছে ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর ব্যবহার করে বিটকয়েন লেনদেন করা হচ্ছে যা কোনো নিয়ন্ত্রণ সংস্থা থেকে অনুমোদিত নয়। এইসব ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহার বা বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর দ্বারা সমর্থিত হয় না।
এরকম অন্যান্য দেশগুলোর সরকারের কাছে বিটকয়েন ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছে বলে বিটকয়েনকে এখন পর্যন্ত বৈধতা দেওয়া হয়নি।
১৩। বিটকয়েনের ভবিষ্যৎ
ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি বিটকয়েন কি বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে। আমাদের মনে এখন প্রশ্ন আসতে পারে বিটকয়েন এর ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে। বর্তমানে অনেক মানুষ ভবিষ্যতে লাভবান হওয়ার জন্য বিটকয়েন ক্রয় করে সংরক্ষণ করে রাখছেন। এবং আপনারা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন মাত্র ১৩ বছরের ব্যবধানে বিটকয়েন আকাশচুম্বী দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সে দিক থেকে বিবেচনা করলে ভবিষ্যতে ব্যবহার আরও বাড়বে। এবং পুরো পৃথিবীর সব দেশ গুলো আস্তে আস্তে বিটকয়েন কে বৈধতার স্বীকৃতি দিবেন। তাহলে বলা যায় ভবিষ্যতে বিটকয়েনের ব্যবহার এবং জনপ্রিয়তা অনেক বৃদ্ধি পাবে তার সাথে সাথে এর দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
Follow topics bangla facebook page
আরো পড়ুনঃ
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪
বিকাশে স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম