থাইরয়েড কমানোর উপায় জেনে নিন
আজকের ব্লগে আমরা থাইরয়েড কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে পারবো।
থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এটি গলার সামনে অবস্থিত এবং শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলো শরীরের বিপাকীয় হার, শক্তির উৎপাদন এবং অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে অতিরিক্ত বা কম থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই থাইরয়েডের সমস্যার চিকিৎসা এবং নিয়ন্ত্রণ জরুরি।এই জন্য থাইরয়েড কমানোর উপায় জানা খুব জরুরি।
এক পলকে সম্পুর্ন পোস্ট
থাইরয়েড কী
থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে মূলত দুটি প্রধান হরমোন নিঃসৃত হয়- ট্রাই আয়োডোথাইরোনিন (T3) এবং থাইরোক্সিন (T4)। এই হরমোনগুলো শরীরের বিপাকীয় কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ আনে। অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হলে এই সমস্যাকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলা হয় এবং যখন কম হরমোন নিঃসৃত হয় তখন তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে।
থাইরয়েড সমস্যা নির্ধারণের লক্ষণ
থাইরয়েড সমস্যা বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এর মধ্যে রয়েছে-
- হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে ওজন বৃদ্ধি পায় আর হাইপারথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে ওজন হ্রাস পায়।
- হরমোনের অস্বাভাবিকতার কারণে শরীরের শক্তি হ্রাস পায় যা অতিরিক্ত ক্লান্তির কারণ হতে পারে।
- শুষ্ক ত্বক বা চুলের সমস্যা দেখা দেয়।
- হরমোন অস্বাভাবিকতার কারণে হৃদয়ের স্পন্দন দ্রুত বা ধীর হতে পারে।
- হাইপারথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে উদ্বেগ এবং হাইপোথাইরয়েডিজমে হতাশা দেখা দেয়।
থাইরয়েড কমানোর উপায়
থাইরয়েড এমন একটি রোগ যেটি আপনার জীবনের কিছু পরিবর্তন এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবেন । সুস্থ জীবন যাপনের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবন পরিচালনার কোন বিকল্প নেই। আমরা যারা অস্বাস্থ্যকর ভাবে জীবন পরিচালন করে তারা প্রায় সময় নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি। যা সুস্থ থাকতে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন পরিচালনা করতে হবে। থাইরয়েড রোগ নিয়ন্ত্রণ করার বেশ কিছু উপায় রয়েছে এবং এটি চিকিৎসা রয়েছে। আমি আপনাদেরকে কয়েকটি উপায় সম্পর্কে জানাবো যেগুলো অনুসরণ করার থাইরয়েড রোগ অনেক নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন এবং সুস্থ স্বাভাবিকভাবেই জীবন পরিচালন করতে পারবেন।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস
থাইরয়েড কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে সঠিক খাদ্যাভ্যাস সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। থাইরয়েডের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে নিম্নলিখিত খাদ্যাভ্যাস গৃহীত হতে পারে-
- থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনের জন্য আইয়োডিন প্রয়োজনীয়। আইয়োডিনযুক্ত লবণ, সামুদ্রিক মাছ, ডেইরি প্রোডাক্টস এবং ডিম খাওয়া উচিত।
- সেলেনিয়াম ও জিঙ্ক থাইরয়েড হরমোনের কার্যক্রমকে সমর্থন করে। বাদাম, মাশরুম, সূর্যমুখীর বীজ এবং সামুদ্রিক খাবার সেলেনিয়ামের চমৎকার উৎস।
- বিপাক ক্রিয়া সচল রাখার জন্য প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। বাদাম, বীজ, শাকসবজি এবং লীন প্রোটিন উৎস খাবার থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
মানসিক চাপ থাইরয়েড হরমোনের অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য নিয়মিত মানসিক চাপ কমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। দৈনিক কয়েক মিনিট সময় নিয়ে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া, ধ্যান করা বা যোগব্যায়াম করা থাইরয়েড হরমোনের কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
পর্যাপ্ত পানি পান
থাইরয়েড কমানোর উপায় গুলোর পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণ এবং বিপাক প্রক্রিয়া সচল রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। পানি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে এবং হরমোনের কার্যক্রম উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।
পর্যাপ্ত ঘুম
পর্যাপ্ত ঘুম স্বাস্থ্যকর হরমোন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ঘুমের ঘাটতি হলে হরমোন নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় এবং থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা অনিয়মিত হতে পারে। তাই দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
নিয়মিত ব্যায়াম
শরীরকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখার জন্য ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম বিপাক ক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক এবং থাইরয়েডের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, সাইক্লিং, এবং যোগব্যায়াম থাইরয়েডের জন্য উপকারী হতে পারে।
সম্পুরক খাদ্য গ্রহন
থাইরয়েড কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে সম্পুরক খাদ্য গ্রহন একটি উপায়।থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু খাদ্য সম্পূরক গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে তা ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত। সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, এবং ভিটামিন ডি সম্পূরক থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।
ওষুধ সেবন
থাইরয়েড সমস্যা গুরুতর হলে ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে সিন্থেটিক থাইরয়েড হরমোন ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে এবং হাইপারথাইরয়েডিজমের জন্য থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমানোর ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে।
থাইরয়েড সমস্যার কারণ
থাইরয়েড সমস্যার বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে।যেমন-
- থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে আইয়োডিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আইয়োডিনের ঘাটতি থাইরয়েড সমস্যার কারণ হতে পারে।
- পারিবারিক ইতিহাস থাইরয়েড সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
থাইরয়েড সমস্যা সমাধানে নিয়মিত স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। প্রাকৃতিক উপায়ে যেমন- সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে ডাক্তারি পরামর্শ এবং ওষুধ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
আরো পড়ুনঃ
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় জেনে নিন