গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার অনলাইন আবেদন পদ্ধতি জেনে নিন
বাংলাদেশের গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার গর্ভবতী ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন।যে মহিলারা গর্ভবতী তাদের নানা ধরনের সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন হয়।অনেক সময় এসব প্রয়োজনীয় সুবিধা মেটানোর জন্য তাদের কাছে অর্থ অভাব হয়।এ কারনে বাংলাদেশ সরকার তাদের সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়ার লক্ষে গর্ভবতী ভাতা প্রদান করে থাকেন।আজকের ব্লগে আমরা গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার জন্য অনলাইন আবেদন পদ্ধতি জানতে পারবো।
গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন পদ্ধতি
গর্ভবতী ভাতা বলতে মূলত বোঝানো হয় গর্ভবতী নারীদের আর্থিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের একটি সামাজিক কর্মসূচী।এই ভাতা মূলত দরিদ্র ও অসচ্ছল গর্ভবতী নারীদের জন্য, যারা গর্ভাবস্থার সময়ে অর্থনৈতিক অভাবের কারনে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ব্যবহার করতে পারে না।গর্ভবতী ভাতার কারনে গর্ভবতী নারীরা তাদের স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে সক্ষম হয়।গর্ভবতী কালীন সময়ে ভাতা প্রদান করা হয় মূলত গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য। অনেক সময় গর্ভাবস্থার সময়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতে পরিবার অক্ষম হয় যার ফলে মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার জন্য অনলাইন আবেদন পদ্ধতি নিন্মরূপ-
- আপনি যদি একজন গর্ভবতী নারী হয়ে থাকেন তাহলে সরকার থেকে ভাতা পাওয়ার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম আপনাকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://mowca.gov.bd/ তে প্রবেশ করতে হবে।
- এরপর আপনাকে সেখানে আপনার ব্যক্তিগত ইনফরমেশন যেমন-আবেদনকারীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, স্বামীর নাম, জন্মস্থান, ধর্ম ,মোবাইল নাম্বার, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রক্তের রুপ, বৈবাহিক তথ্য ইত্যাদি ইনফরমেশন প্রদান করে ফরম পূরণ করতে হবে।
- পরবর্তী ধাপে আপনাকে আপনার বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানার যাবতীয় ইনফরমেশন প্রদান করতে হবে।
- এরপর আপনাকে আপনার অর্থনৈতিক অবস্থার যাবতীয় তথ্য প্রদান করে নিতে হবে।
- পরবর্তী ধাপে আপনার পেমেন্ট করার তথ্য প্রদান করতে হবে।যার অর্থ হলো সরকার আপনাকে কিভাবে পেমেন্ট করবে বা আপনি কিভাবে পেমেন্ট নিতে চাচ্ছেন তার যাবতীয় তথ্য প্রদান করতে হবে।আপনি যদি ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে পেমেন্ট নিতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার একাউন্টের ধরণ, প্রতিষ্ঠানের নাম, হিসাবের নাম, হিসাব নং প্রদান করতে হবে।
- এরপর আপনাকে আপনার স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে।
- সর্বশেষ ধাপে আপনার ৩০০x৩০০ পিক্সেল সাইজের ছবি আপলোড করলেই আপনার অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার শর্তসমূহ
- গর্ভবতী কালীন সময়ে ভাতা পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- আপনার বয়স অবশ্যই ২০ বছরের বেশি হতে হবে এবং আপনার পরিবারের আয় ১৫০০০ টাকার নিচে হতে হবে।
- আপনাকে আপনার স্থানীয় ইউনিয়ন বা পৌরসভায় নিবন্ধন করতে হবে, এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা যাচাইকৃত হতে হবে।
- আপনাকে নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকে গর্ভকালীন সেবা গ্রহণ করতে হবে।
- আপনার পরিবারের কারো কৃষি জমি, মৎস চাষের জন্য কোনো পুকুর নেই এমন হলে আপনি ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি অগ্রাধিকার পাবেন।
গর্ভবতী ভাতার পরিমান ও ভাতার জন্য আবেদনের সময়সূচী
সরকার থেকে নির্ধারন করে দেওয়া হয়েছে আপনার গর্ভকালীন সময়ে আপনি মাসিক মোট ৮০০ টাকা করে ভাতা পাবেন যা প্রতি ৬ মাস পর পর ২ বছর পর্যন্ত প্রদান করা হবে।সুতরাং আপনি ৬ মাস পর এক কালীন ভাবে ৪৮০০ টাকা ভাতা হিসেবে পাবেন।অতএব আপনি ২ বছরে মোট ১৯২০০ টাকা সরকার থেকে ভাতা পাবেন।আপনার সন্তান যদি দুটি হয় তবে সেক্ষেত্রে আপনি ৩ বছর পর্যন্ত প্রতি ৬ মাস পর পর ৪৮০০ টাকা করে ভাতা পাবেন।
সাধারনত আপনার পাওয়া ভাতা এর অর্থ ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা কত্রা হবে।৬৪টি জেলার সদর উপজেলায় জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রোগ্রাম অফিসাররাই সাধারনত এ দায়িত্ব পালন করবেন।গর্ভবতী কালীণ সময়ে ভাতা পাওয়ার জন্য আপনার পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি, গর্ভবতী সনদপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিকত্ব পরিচয় পত্র, টিকা গ্রহনের কার্ড,বিকাশ/নগদ/রকেট নাম্বার বা ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার প্রয়োজন হবে।
আপনাকে গর্ভবতী কালীন ভাতা পাওয়ার জন্য প্রতি মাসের ১-২০ তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের সময় আপনাকে অবশ্যই ৪-৬ মাসের গর্ভাবস্থায় থাকতে হবে।
গর্ভবতী ভাতা কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র মায়েরা শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তাই পান না তারা তাদের শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পানের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহনের প্রয়োজনীয়তা, প্রসব সেবা সম্পর্কে আরো বেশি সচেতন হতে পারেন।২০২৪ সালে গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া গর্ভবতী মহিলাদের কথা চিন্তা করে আরও সহজ করা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ
প্রবাসী কল্যান ব্যাংক লোনের নিয়ম জেনে নিন