ক্ষুদ্র পারমানবিক ব্যাটারি কি? চার্জ ছাড়া ৫০ বছর পর্যন্ত চালাতে পারবে
বেটাভোল্ট নামে এক চীনা কোম্পানি একটি নতুন নিউক্লিয়ার ব্যাটারি তৈরী করেছে যা চার্জ করা ছাড়াই ফোনকে ৫০ বছর পর্যন্ত চালাতে পারবে। উক্ত কোম্পানি দাবি করছে এই ক্ষুদ্র পারমানবিক ব্যাটারি এর সাইজ নাকি একটি কয়েনের থেকেও ছোট।এই কম্প্যাক্ট ব্যাটারিতে ৬৯ টি নিউক্লিয়ার আইসোটোপ রয়েছে যা ১০০ মাইক্রোওয়াট জেনারেট করতে পারে ও ৩ ভোল্ট এর ইলেক্ট্রিসিটি ভোল্টেজ প্রদান করবে। আজকের ব্লগে আমরা ক্ষুদ্র পারমানবিক ব্যাটারি সম্পর্কে জানতে পারবো।
এক পলকে সম্পুর্ন পোস্ট
ক্ষুদ্র পারমানবিক ব্যাটারি কি
নতুন এই ব্যাটারি প্রযুক্তি ইলেকট্রিক পণ্যের জগতে বিপ্লব নিয়ে আসার মত ক্ষমতা রাখে যার ফলে চার্জার বা পোর্টেবল পাওয়ার ব্যাংক এর মত এক্সেসরিজের প্রয়োজন কমে যাবে।এ ব্যাটারির ক্যাপাসিটি ও জীবনকালে চার্জ দিয়ে চলা লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির চেয়ে অনেক বেশি। বর্তমানে অনেক ব্যাটারি অধিক তাপমাত্রার সংস্পর্শে আসলে কিংবা সামান্য ড্যামেজ হয়ে গেলে অকেজো হয়ে যায়। বেটাভোল্ট জানায় তাদের BV100 নিউক্লিয়ার ব্যাটারির ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনো সমস্যা পাওয়া যায় না এটি পাংচার হয়ে গেলে কিংবা গানশট এর সংস্পর্শে আসলেও আগুন ধরার কোনো সম্ভাবনা নেই কিংবা বিস্ফরিতও হবে না।এই আনলিমিটেড শক্তি দ্বারা কোনো ড্রোন কোনো রকম বিরতি ছাড়াই চলতে পারবে, ফোন ইচ্ছামত ব্যবহার করা যাবে চার্জ ফুরোনোর চিন্তা ছাড়াই, ইলেকট্রিক কার রিচার্জ এর প্রয়োজন হবেনা। বর্তমানে পারমাণবিক বা নিউক্লিয়ার ব্যাটারি মহাকাশযান, পানির নিচের সিস্টেম, স্বয়ংক্রিয় বৈজ্ঞানিক স্টেশনের পাশাপাশি মার্স রোভারের মতো স্পেসক্রাফটে ব্যবহৃত হয়, তবে সেগুলি বড়, ভারী এবং প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে, সেইসাথে ব্যয়বহুলও। বেটাভোল্ট জানিয়েছে তাদের ব্যাটারি অন্যভাবে বানানো হয়েছে।ব্যাটারিটি এখনো পাইলট টেস্টিং পর্যায়ে রয়েছে। তবে বেটাভোল্ট এর পরিকল্পনা হলো ফোন ও ড্রোন এর পাশাপাশি এরোস্পেস ইকুইপমেন্ট, এআই, মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট, এডভান্সড সেন্সর, ও মাইক্রো-রোবোটেও এই ব্যাটারি ব্যবহার করা।বেইজিং-ভিত্তিক কোম্পানিটি এই ব্যাটারি তৈরীতে পেসমেকার ও স্যাটেলাইট এর মত ডিভাইস থেকে ইন্সপিরেশন পেয়েছে ।বেটাভোল্ট জানায় তারা ২০২৫ সালে ১-ওয়াট ব্যাটারি প্রডিউস করতে পারবে। যদিওবা এখনো অনেক লম্বা সময় বাকি এই প্রযুক্তি গ্রাহকের হাতের আসার জন্য কিন্তু কোম্পানিটি দাবি করছে তারা অনেক ইউরোপিয়ান ও আমেরিকান সাইন্টিফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট ও এন্টারপ্রাইজ থেকে এগিয়ে আছে গবেষণার দিক দিয়ে।
ক্ষুদ্র পারমানবিক ব্যাটারি যেভাবে কাজ করে
নিকেল-৬৩ নামে একটি রেডিওএকটিভ উপাদান ব্যবহার করে বেটাভোল্ট এর বিজ্ঞানীগণ এই ব্যাটারি তৈরি করেছেন। এই উপাদানকে এনার্জি সোর্স হিসেবে ও ডায়মন্ড সেমিকন্ডাক্টরকে এনার্জি কনভার্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।বেটাভোল্ট এর ভাষ্যমতে এর এটমিক এনার্জি ব্যাটারির সুবিধা হলো ওজনে হালকা হওয়া, লম্বা সময় ধরে ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করা ও হাই এনার্জি ডেনসিটি, ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হলো এই ব্যাটারি মাইনাস ৬০ কিংবা ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও ঠিকঠাক কাজ করবে।মডিউলার ডিজাইনের কল্যাণে একাধিক অ্যাটোমিক বেটারি একই ডিভাইসে ব্যবহার করা যাবে যার মাধ্যমে অধিক এনার্জি আউটপুট প্রদান করা সম্ভব হবে। এর ফলে অটোমেটিক টেকনোলজি কিংবা এর মত ক্ষেত্রগুলোতেও এর ব্যবহার সম্ভব হবে।
ক্ষুদ্র পারমানবিক ব্যাটারি ব্যবহারে সুবিধা
- দীর্ঘমেয়াদী শক্তি সরবরাহ-পারমাণবিক-ব্যাটারির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর দীর্ঘমেয়াদী শক্তি সরবরাহের ক্ষমতা। সাধারণ ব্যাটারির তুলনায়, পারমাণবিক-ব্যাটারি হাজারো বছর পর্যন্ত শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম।
- কম মেইনটেন্যান্স-এই ব্যাটারির রেডিওআ্যাকটিভ উপাদান সাধারণত খুবই স্থিতিশীল হয় যার ফলে এটি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে এবং কম মেইনটেন্যান্সের প্রয়োজন হয়।
- ছোট আকার: পারমাণবিক-ব্যাটারি সাধারণভাবে ছোট আকারের, যা স্থান সংরক্ষণে সহায়ক।
ক্ষুদ্র পারমানবিক ব্যাটারি ব্যবহারে অসুবিধা
অধিকাংশ মানুষ তাদের পকেটে নিউক্লিয়ার ম্যাটেরিয়াল অবশ্যই বহন করতে চাইবে না। বিশেষ করে যারা ইতিমধ্যে এইচবিওর চেরনোবিল সিরিজটি দেখেছেন তারা নিউক্লিয়ার এক্সপ্লোশন এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ভালোভাবেই আন্দাজ করে থাকতে পারবেন। তবে বেটাভোল্ট রেডিয়েশনের ব্যাপারে জানিয়েছে তাদের তৈরি এই ব্যাটারি কোন ধরনের বাহ্যিক রেডিয়েশন নির্গমন করে না এবং মানুষের শরীরের মধ্যে ব্যবহৃত হওয়া পেসমেকার এর মত মেডিকেল ডিভাইসেও ব্যবহারের উপযোগী।
পারমানবিক ব্যাটারি ব্যবহারে পরিবেশগত প্রভাব
পারমাণবিক-ব্যাটারির পরিবেশগত প্রভাব বিভিন্ন দিক থেকে বিবেচনা করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে উপাদানের প্রাপ্তি, ব্যবহারের পরিসীমা এবং নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া।
-
রেডিওআ্যাকটিভ উপাদানের ব্যবহারের প্রভাব-পারমাণবিক-ব্যাটারি মূলত রেডিওআ্যাকটিভ উপাদান ব্যবহার করে, যেমন স্ট্রনটিয়াম-৯০ বা পলোনিয়াম-২২৯। এই উপাদানগুলি বিকিরণ ছড়ায়, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যগত প্রভাব ফেলতে পারে যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়। তবে, পারমাণবিক-ব্যাটারি ডিজাইন করা হয় যাতে এই বিকিরণ কনটেইনারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যা ব্যবহারের সময় পরিবেশের জন্য সাধারণত নিরাপদ।
-
প্রাপ্তি ও নিষ্পত্তি-পারমাণবিক-ব্যাটারির উপাদানগুলির প্রাপ্তি এবং নিষ্পত্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ। রেডিওআ্যাকটিভ উপাদানগুলি প্রাপ্তির সময় খনন এবং প্রক্রিয়াকরণ প্রক্রিয়া পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও, ব্যাটারির নিষ্পত্তি বা রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া যদি যথাযথভাবে পরিচালিত না হয়, তাহলে এটি পরিবেশে রেডিওআ্যাকটিভ দূষণ ঘটাতে পারে।
-
দূষণ ও সুরক্ষা-পারমাণবিক-ব্যাটারির ব্যবহারে যদি সঠিক সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকতে পারে, যা পরিবেশের জন্য ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে রেডিওআ্যাকটিভ লিকেজ, যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
- স্বাস্থ্যগত প্রভাব-পারমাণবিক-ব্যাটারির রেডিওআ্যাকটিভ উপাদানের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পরিলক্ষিত হতে পারে যদি এটি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়। তবে, সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা প্রোটোকল নিশ্চিত করলে এই প্রভাবগুলি সীমিত করা সম্ভব।
ক্ষুদ্র পারমানবিক ব্যাটারি প্রযুক্তির পরিবেশগত প্রভাব নির্ভর করে এর ব্যবহারের পদ্ধতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর। যত্ন সহকারে ডিজাইন এবং সঠিক পরিচালনার মাধ্যমে, পারমাণবিক-ব্যাটারির পরিবেশগত প্রভাবকে ন্যূনতম করা সম্ভব।
Follow topics bangla facebook page
আরো পড়ুনঃ