এমপক্স কতটা ভয়ংকর আসুন জেনে নেই
বর্তমানে নতুন ভাইরাসের আগমন ঘটেছে সেটার নাম হচ্ছে এমপক্স।আমরা জানি বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। করোনা মহামারির পর বর্তমানে আরেক উদ্বেগের নাম এখন এমপক্স (মাঙ্কিপক্স)। প্রথমে এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াচ্ছে।সম্প্রতি বিশ্বের অনেক দেশে এমপক্সের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থাও জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।আজকের ব্লগে আমরা এমপক্সের যাবতীয় তথ্য জানতে পারবো।
এক পলকে সম্পুর্ন পোস্ট
এমপক্স কী
এমপক্স একটি ভাইরাস জনিত প্রাণিজাত (Zoonotic) রোগ। ১৯৫৮ সালে ডেনমার্ক এ বানরের দেহে সর্বপ্রথম এ রোগ শনাক্ত হয় বলে একে মাঙ্কিপক্স বলা হয়। ১৯৭০ সালে আফ্রিকার একটি দেশে মানবদেহে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর আফ্রিকার কয়েকটি দেশে বিক্ষিপ্তভাবে এর সংক্রমণ ঘটতে দেখা যায়।
এমপক্স আলাদা ধরনের একটি পক্স ভাইরাস। এমপক্সের প্রধান দুইটি ধরন আছে ক্লেড ১ এবং ক্লেড ২। দুইটি ধরনের মধ্যে আবার সাব ডিভিশন এ, বি রয়েছে।কঙ্গোতে দীর্ঘদিন এমপক্স প্রাদুর্ভাবের কারণ ছিল ক্লেড ১ ভাইরাস আর ইউরোপে ছড়িয়েছে ক্লেড ২ ভাইরাস। ক্লেড ২ ভাইরাসে মৃত্যুহার কম। কিন্তু আফ্রিকায় যেটা ছড়িয়েছিল ক্লেড ১, সেটার মৃত্যুহার বেশি। ক্লেড ১ ধরনটি গুরুতর। এর মৃত্যুহার ১০০ জনের মধ্যে ৪ জন।এই ভাইরাসগুলো আগে থেকেই ছিল, মাঝখানে কমে গিয়েছিল।
সম্প্রতি আবার বাড়তে শুরু করেছে এমপক্স ভাইরাস সংক্রমণ। আফ্রিকার কঙ্গোতেই আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আশপাশের দেশে ছড়িয়েছে এবং ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও ছড়াচ্ছে। সংক্রমণ মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২০২২ সালের পর মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এমপক্স কীভাবে ছড়ায়
এমপক্স ভাইরাসের উদ্ভব হয়েছে বন্যপ্রাণী থেকে, এটি প্রাণীবাহিত রোগ। আগে যারা বন্যপ্রাণী শিকার করতে যেতেন তারা সংক্রমিত হতেন। কিন্তু বর্তমানে এমপক্স ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে। এজন্য ঝুঁকি বেড়ে গেছে।এমপক্স ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে। এমপক্স সংক্রমিত ব্যক্তিকে র্স্পশ করা, চুমু দেওয়া, যৌন সম্পর্ক থেকে এটি ছড়াতে পারে।এমপক্স আক্রান্ত বন্যপ্রাণী শিকার করা, চামড়া তোলা, মাংস কাটা এমনকি রান্নার সময়, কম তাপে রান্না করা খাবার খেলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
আমাদের দেশে বন্যপ্রাণী শিকার করা হয় না খুব একটা। কিন্তু এমপক্স আক্রান্ত প্রাণীর কাছাকাছি গেলেও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের খুব কাছাকাছি থাকলে সংক্রমণ ঝুঁকি থাকে।এমপক্স সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার করা পোশাক সহ যেকোনো ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহার করা থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে।সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার করা ইঞ্জেকশনের সুঁই অন্য কারো শরীরে প্রবেশ করালেও এমপক্স হতে পারে।সন্তান সম্ভবা নারী এমপক্স আক্রান্ত হলে তার সন্তানও এমপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।এমপক্স শুকিয়ে যাওয়ার পর ফোসকার আবরণ যদি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, সেখান থেকে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে।
এমপক্সের সাধারন উপসর্গ
এমপক্স এ আক্রান্ত ব্যক্তির বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।এমপক্সের সাধারন উপসর্গ গুলো নিন্মরূপ-
- জ্বর হওয়া।
- প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, পিঠে ব্যথা করা।
- মাংসপেশিতে ব্যথা।
- অবসাদগ্রস্ততা ও ক্লান্তি লাগা।
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া ও ব্যথা।
- এমপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বরের পাশাপাশি শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি ওঠে। পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায়।
- ফুসকুড়িগুলো অত্যন্ত চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। পরবর্তীতে পুঁজ ও ক্ষত সৃষ্টি হয়।
এমপক্স প্রতিরোধে করনীয়
সাধারণত স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের জন্য ব্যবহৃত টিকা এমপক্স প্রতিরোধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর। অনেক গবেষণার পর এমপক্স এর বিরুদ্ধে কাজ করে এমন তিনটি টিকা আবিষ্কার করা হয়েছে। তবে এর পরিমাণ সীমিত। এমপক্স এর চিকিৎসা সহজলভ্য না হওয়ায় প্রতিরোধের পরামর্শ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। এ জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। চিকিৎসাকেন্দ্রে কিংবা বাড়িতে আক্রান্তদের সেবা দেওয়ার সময় গ্লাভস এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরতে হবে। এ ছাড়া মাংস রান্নার সময় সঠিকভাবে সিদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না।
পক্স শুকিয়ে যাওয়ার পর ফুসকুড়ির আবরণ যেন যেখানে সেখানে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাসায় থাকতে হবে। যতদিন শরীরে ফোসকার স্থানে নতুন আবরণ তৈরি না হয় ততদিন পর্যন্ত।
এমপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির নিরাপদে থাকার উপায়
- আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকা।
- আক্রান্ত ব্যক্তি এবং সেবা প্রদানকারীর মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
- সাবান পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া (৩০ সেকেন্ড)।
- হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা।
- আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত দ্রব্যাদি যেমন সাবান, জীবাণুনাশক ও ডিটারজেন্ট দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
- আক্রান্ত জীবিত বা মৃত বন্য প্রাণী থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা।
- এমপক্স রোগ বয়স্কদের তুলনায় বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি। তাই শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
এমপক্সের চিকিৎসা
এমপক্স রোগের তেমন সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। এই রোগের ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা এখনো চলছে। তবে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যায়। রোগীকে আইসোলেশনে রেখে রোগের ভিত্তিতে চিকিৎসা দিতে হবে।ফোসকার ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যথার ওষুধ দিতে হবে, পুষ্টিকর খাবার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে। জলবসন্তের রোগীর মতো করেই এমপক্সের রোগীর যত্ন নিতে হবে। রোগীর অবস্থা জটিল হলে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। যেহেতু এমপক্স ছোঁয়াচে তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে ভাইরাস না ছড়ায়।
এমপক্স ভাইরাস রোধে বাংলাদেশের করনীয়
এমপক্স উদ্বেগের কারণ কতটা তা নির্ভর করে বাংলাদেশের কাছাকাছি দেশগুলোতে সংক্রমণ কেমন। যদি আশপাশের অঞ্চলে এমপক্স ছড়াতে থাকে তাহলে তা দেশের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের কারণ হবে। বর্তমানে প্রাথমিক ঝুঁকি অবস্থায় সবাইকে সচেতন হতে হবে।বিমানবন্দর, নৌ ও স্থল বন্দরে স্ক্রিনিং চালু করতে হবে। এমপক্সের লক্ষণ আছে এমন ব্যক্তিদের পরীক্ষা করতে হবে।এমপক্স একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তা মোকাবিলার জন্য কোনো একটি দেশের একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে যেহেতু ভাইরাসটি, এটি আরও মিউটেড করে আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।সবার সমন্বিত প্রচেষ্টাতেই কেবল এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ
সব সময় ঘুম ঘুম ভাব দূর করার উপায়
জেনে নিন চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে
মোটা হতে চান? মোটা হওয়ার খাদ্য তালিকা দেখে নিন
Follow topics bangla facebook page