হস্তমৈথুন সম্পর্কে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা
আমাদের সমাজে পূর্বকাল থেকে হস্তমৈথুন সম্পর্কে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা রয়েছে যেগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে গবেষণা করে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। এইগুলো মানুষের মন গড়া কথা ছাড়া আর কিছুই না। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ভেবে থাকে হস্তমৈথুন করলে শারীরিক ভাবে মারাত্মক ক্ষতি হয় কিন্তু আপনি যদি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে হস্তমৈথুন করেন তাহলে কোন ধরনের ক্ষতি হবে না বরং উপকার হবে। শুধু হস্তমৈথুন নয় অতিরিক্ত কোন কিছুই আমাদের জন্য ভালো না। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ যুবক হস্তমৈথুন এর সাথে জড়িত রয়েছে। প্রতিটি ছেলে মানুষের হস্তমৈথুন সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা গুলোর সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা উচিত। অনেকেই এইসব ভুল ধারণাগুলোকে সত্যি মনে করে অনেক আতঙ্কের মধ্যে থাকে। তাহলে চলুন হস্তমৈথুন সম্পর্কে ভুল ধারণা গুলো জেনে নেওয়া যাক
এক পলকে সম্পুর্ন পোস্ট
হস্তমৈথুন সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা
আপনি যদি মাসে ৮-১০ বার হস্তমৈথুন করেন তাহলে তেমন কোনো সমস্যা দেখা দিবে না কিন্তু যখন অতিরিক্ত( দিনে তিন থেকে চার বার) হস্তমৈথুন করবেন তখন আপনার শরীরে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই পরামর্শ থাকবে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থেকে হস্তমৈথুন করবেন তাহলে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন।
আমাদের দেশে হস্তমৈথুন সম্পর্কে সব থেকে বেশি যেই বিষয়গুলোর সম্পর্কে ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
রক্তের দ্বারা বীর্য তৈরি হয়
অনেকেই ভেবে থাকে রক্তের দ্বারা বীর্য তৈরি হয় যার কারণে অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করলে রক্ত কমে যাবে। আসলে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা রক্ত আমাদের শরীরকে সচল রাখতে সাহায্য করে। আমাদের শারীরিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বীর্য তৈরি হয় এবং এটি প্রতিনিয়ত তৈরি হতে থাকে।
চিকন হয়ে যাওয়া
অনেকেই মনে করেন হস্তমৈথুন করলে অতিরিক্ত শক্তি খরচ হয় যার কারণে স্বাস্থ্য চিকন হয়ে যায়। হস্তমৈথুনের সাথে স্বাস্থ্য চিকন হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। আমার পরিচিত একজন বন্ধু ছিল যে নিয়মিত হস্তমৈথুন করে তারপরও তার স্বাস্থ্য মোটা অপরদিকে আর একটা বন্ধু মাসে ৩-৪ বার হস্তমৈথুন করেন কিন্তু তার স্বাস্থ্য চিকন। তাই স্বাস্থ্য চিকন ও মোটা খাদ্যবাস, জীবন পরিচালনা, হরমোন এগুলোর মাধ্যমে নির্ধারণ হয়।
দ্রুত বীর্যপাত হওয়া
নিয়ন্ত্রণের মধ্যে যদি হস্তমৈথুন করেন তাহলে দ্রুত বীর্যপাত হবে না আর যদি অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করে থাকেন তাহলে দ্রুত বীর্যপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
প্রায় মানুষই হস্তমৈথুন করার সময় দ্রুত বীর্যপাত করার চেষ্টা করে যাতে সে দ্রুত সুখ পায়। এর ফলে তার ব্রেন সব সময় দ্রুত বীর্যপাত হওয়ার জন্য সেট হয়ে যায়। পরবর্তীতে দৈহিক মিলনের সময় দ্রুত বীর্যপাত হয় তাই যখন হস্তমৈথুন করবেন চেষ্টা করবেন দীর্ঘ সময় ধরে হস্তমৈথুন করার।
দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া
আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি কমার জন্য দায়ী চোখের মধ্যে রেটিনা জনিত সমস্যা। অনেকে ভাবেন হস্তমৈথুন করলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায় কিন্তু গবেষণা করে পাওয়া গেছে দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়ার সঙ্গে হস্তমৈথুন সরাসরি ভাবে জড়িত নয়।
অ্যাডাম অ্যান্ড ইভ জেনি স্কাইলার , (পিএইচডি, এলএমএফটি-এর প্রত্যয়িত সেক্স থেরাপিস্ট এবং সেক্সোলজিস্ট) এর মতে, এটি জনগণকে হস্তমৈথুন থেকে দূরে রাখা বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জনগণের বানানো পুরনো একটি ভুল ধারণা। হস্তমৈথুন করার সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া বা অন্ধ হয়ে যাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই।
সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম
হস্তমৈথুন করলে কি সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম হয়? এর সরাসরি সোজা উত্তর হচ্ছে ‘না’। যদি হস্তমৈথুনের ফলে সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম হয়ে যায় তাহলে অপর লিঙ্গ মানুষের সাথে যৌন মিলন করলেও সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম হবেন। এর কারণ হচ্ছে হস্তমৈথুনের ফলেও যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং অন্যের সাথে যৌন মিলন করলেও যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং উভয় ক্ষেত্রেই বীর্যপাত ঘটে শুধু পার্থক্য হচ্ছে হস্তমৈথুন একান্ত করা হয় আর যৌন মিলন দুইজন মিলে করা হয়। কিন্তু দুইটার প্রক্রিয়া প্রায় একই।
সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য বীর্যের প্রয়োজন হয় আর একজন সুস্থ মানুষের সব সময় বীর্য তৈরির প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
একজন পুরুষ যখন অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করেন তার বীর্যের পরিমাণ স্পষ্টতই কমে যায়। প্রায় সময় হস্তমৈথুন করলে বীর্যপাতের পরিমাণ অনেকাংশে কমে যায় তাই এটি পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
তাই সন্তান জন্ম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, কিছুদিন যৌন মিলন বা হস্তমৈথুন থেকে বিরত থাকবেন এর ফলে আপনার বীর্যের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং সন্তান জন্ম দিতে কোন সমস্যা তৈরি হবে না।
ডা.ভাবতেজ এনগান্টি ( ইউরোলজিস্ট) বলেছেন হস্তমৈথুনের করলে কখনো পুরুষের বন্ধ্যাত্ব হয় না।
প্রসাবের রাস্তা দিয়ে বীর্য বের হওয়া
এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয় অনেকে এই ব্যাপারটা নিয়ে ভয় পেয়ে যান। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রসব করার পরে সাদা তরল জাতীয় পদার্থ বের হয় এতে আতঙ্ক হওয়ার কোন কারণ নেই এটি স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। মাঝেমধ্যে মুত্র ত্যাগ করার সময় জুরে চাপ দিলে প্রস্রাবের সাথে হালকা আঠালো তরল পদার্থ বের হতে পারে।
আপনি যখন অনেকদিন হস্তমৈথুন বা যৌন মিলন করবেন না। তখন বীর্যের থলি ভরাট হয়ে যায়। যার কারনে প্রসাবের রাস্তা দিয়ে আঠালো পদার্থ গুলো বের হয়
লিঙ্গ খাড়া না হওয়া
হস্তমৈথুন করলে লিঙ্গ খাড়া হয় না বা পরবর্তীতে লিঙ্গ খাড়া না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন ভুল তথ্য আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। যার সাথে ডাক্তারদের মতামত এবং গবেষণার কোন মিল নেই। লিঙ্গ খাড়া হয়ে থাকে অতিরিক্ত রক্তচাপের কারণে এবং যৌন উত্তেজনার ফলে এখানে হস্তমৈথুনের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না।
যাদের লিঙ্গ খাড়া হয় না তাদের অন্য শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে যেমন হার্টের সমস্যা, যৌন দিক থেকে মানসিকভাবে বিপস্ত্।
আরো পড়ুনঃ হস্তমৈথুন থেকে বাঁচার উপায়
শেষ কথা
আজকে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করেছি সবগুলো বড় বড় রিসোর্স থেকে ধারণা নিয়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। প্রথম থেকে একটা কথা বলছি আবারো বলতে চাই অতিরক্ত কোন কিছু ভালো না তাই আপনি যদি অতিরিক্ত হস্তমৈথনে লিপ্ত থাকেন তাহলে শারীরিক ও মানসিক ভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যারা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে হস্তমৈথুন করেন তাদের কোন শারীরিক সমস্যা হবে না আরো শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে।
আমাদের ইসলাম ধর্মে হস্তমৈথুনের সম্পর্কে সরাসরি বারণ করা আছে। তাই যারা মুসলিম তারা এই পাপ কাজ থেকে দূরে থাকবেন। আপনি যদি বিয়ের উপযুক্ত হন তাহলে বিয়ে করে নিন।
হস্তমৈথুন সম্পর্কে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা সম্পর্কের আর্টিকেল যদি আপনাদের কাছে ভালো লাগে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে পড়ার সুযোগ করে দিন ধন্যবাদ।